তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্কি পর্যটনকেন্দ্রে একটি হোটেলে ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা ৬৬ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হোটেলের আতঙ্কিত অতিথিরা রশি ব্যবহার করে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ফুটেজে দেখা গেছে, জানালাগুলো থেকে বিছানার চাদর ঝুলছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেউ কেউ নিরাপত্তার জন্য লাফ দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
আংকারা থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কারতালকায়া রিসোর্টে দুর্ঘটনাস্থলে কয়েকজন মন্ত্রী উপস্থিত হয়েছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কারতালকায়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ব্যথা অসীম। ৬৬ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে এবং ৫১ জন আহত হয়েছে।
কাঠের আস্তরণযুক্ত ১২ তলা গ্র্যান্ড কারতাল হোটেলে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৩টা ২৭ মিনিটে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, অগ্নিকাণ্ডের সময় হোটেলটিতে ২৩৮ জন অতিথি নিবন্ধিত ছিল, যা দুই সপ্তাহের স্কুল ছুটির সময় সর্বোচ্চ বলে বিবেচিত।
বেসরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনটিভি জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন জানালা থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন।
আগুন রেস্তোরাঁয় শুরু হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদিও এর সঠিক কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। হোটেলের একটি অংশ পাহাড়ের পাশে হওয়ায় অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।
এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান আংকারায় তার ক্ষমতাসীন একে পার্টির কংগ্রেসে ভাষণ সংক্ষিপ্ত করে বলেন, আমাদের কষ্ট অসীম, আমাদের হৃদয়ের ব্যথা গভীর।
তিনি আরো জানান, আগুনের কারণ খুঁজে বের করতে প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ঘটনার প্রতিটি দিক পরিষ্কার করতে ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেলিভিশন ফুটেজে দেখা গেছে, হোটেল থেকে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী আকাশে উঠছে, আর পেছনে বরফে ঢাকা পাহাড়। পাশের একটি হোটেলের কর্মচারী বারিস সালগুর এনটিভিকে বলেন, আমি রাতের মধ্যভাগে চিৎকার শুনেছিলাম, (হোটেলের) বাসিন্দারা সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল। তারা কম্বল চাইছিল, বলছিল লাফ দেব। আমরা যা পেরেছি করেছি, দড়ি, বালিশ, এমনকি সোফা নিয়ে গিয়েছিলাম। আগুন তাদের কাছে পৌঁছলে কেউ কেউ লাফ দিয়েছিল।
‘নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না’
ফুটেজে হোটেলের ধ্বংসপ্রাপ্ত লবিতে ভাঙা কাচ, পোড়া কাঠের আসবাব ও রিসেপশন ডেস্ক দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, ভবনটি ধসে পড়তে পারে।
আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া একজন স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, আগুন শুরু হওয়ার সময় হোটেলে কোনো অ্যালার্ম বেজে ওঠেনি। তিনি অভিযোগ করেন, সেখানে কোনো অগ্নিনির্বাপকব্যবস্থা, যেমন ধোঁয়া শনাক্তকারী বা জরুরি সিঁড়ি ছিল না। তবে পর্যটনমন্ত্রী নুরি এরসয় বলেন, জরুরি অবস্থায় বের হওয়ার জন্য হোটেলে দুটি ব্যবস্থা ছিল।