প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে শিগগির বহুল আলোচিত আয়নাঘর পরিদর্শন করতে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তার এ অভিপ্রায় তুলে ধরেছেন বলে তার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বিকাল সাড়ে ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা। পাশাপাশি ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল’ পরিদর্শনের অনুরোধ জানান তারা।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্ত হবেন এবং অভয় পাবেন।
বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়। ছয় বছরের শিশু গুম হওয়ার ঘটনাও তদন্তে উঠে এসেছে বলে জানান কমিশন সদস্যরা।
মুহাম্মদ ইউনূস কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেন, আপনাদের তদন্তে যেসব ঘটনা উঠে এসেছে, তা গা শিউরে ওঠার মত। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। অভিযোগ জানাতে প্রথমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও পরে তা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
কমিশন গত ১৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিয়েছে। পরের দিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়।
‘গুমের’ ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করা হয় ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে জমা দেয়া ওই প্রতিবেদনে।
সেদিন প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর গুম বিষয়ক কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন পড়বে।
কমিশনের অনুসন্ধান এবং অভিযোগের ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সরাসরি নির্দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ের শাসনামলে ‘গুম’, ‘আটকে রেখে নির্যাতন’ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ধরে এনে ‘হত্যার’ অভিযোগের একের পর এক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হয়।
বিভিন্ন অভিযোগ ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ‘গুম, নির্যাতন ও ধরে এনে হত্যার’ মত ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। অনেকগুলো বাহিনীর কার্যালয়ে পাওয়া গেছে নির্যাতনের বিশেষায়িত যন্ত্র ও সাউন্ড প্রুফ কক্ষ।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন বাহিনীর দপ্তরে ‘আয়নাঘর’ বা তুলে নিয়ে আসা ব্যক্তিদের দিনের পর দিন আটকে রাখার জন্য কক্ষ তৈরি করার কথা তুলে ধরা হয়।