মরক্কো উপকূলে একটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে। খবর ডন ও রয়টার্সের।
অভিবাসী অধিকার সংস্থা ওয়াকিং বর্ডার্স বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) জানিয়েছে, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার চেষ্টা করছিল নৌকাটি।
খবরে বলা হয়, গত ২ জানুয়ারি মৌরিতানিয়া থেকে নৌকাটি যাত্রা শুরু করে। এতে ৮৬ জন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে ৬৬ জনই পাকিস্তানি। প্রায় দুই সপ্তাহ চলার পর পথে নৌকাটি ডুবে যায়।
অধিকার সংস্থাটি বলছে, যাত্রীদের মধ্যে ৫০ জন অভিবাসী ডুবে যেয়ে থাকতে পারে, যাদের মধ্যে অনেকেই পাকিস্তানি। রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, মরক্কোর কর্তৃপক্ষ বুধবার নৌকা থেকে অন্তত ৩৬ জনকে উদ্ধার করে।
ওয়াকিং বর্ডার্সের প্রধান নির্বাহী (সিইও) হেলেনা ম্যালেনো এক এক্স বার্তায় বলেন, বাকিরা ডুবে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যাদের মধ্যে ৪৪ জনই পাকিস্তানের নাগরিক। এই অধিকারকর্মী আরও জানান, ‘তারা ১৩ দিন ধরে বিপন্ন অবস্থার মধ্যে কাটিয়েছে। কিন্তু কেউ তাদের উদ্ধার করতে আসেনি।’
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরও নৌকাডুবির ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। জানিয়েছে, মরক্কোর কাছে ৮০ জন যাত্রী বহনকারী একটি নৌকা ডুবে গেছে। মৃতদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি পাকিস্তানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার পাক পররাষ্ট্র দফতরের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাবাতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাস মন্ত্রণালয়কে ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত করে।
বিবৃতি অনুযায়ী, পাকিস্তানিসহ বেশ কয়েকজন বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি মরক্কোর দাখলার কাছে একটি শিবিরে আটকে আছেন। রাবাতে অবস্থিত আমাদের দূতাবাস স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছে। এছাড়াও পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য দূতাবাসের একটি দল দাখলায় পাঠানো হয়েছে।
পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, তাদের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট ইউনিট সক্রিয় করা হয়েছে এবং উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানিদের জন্য সম্ভাব্য সকল সুবিধা প্রদানের জন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দ্রুত এ ঘটনার প্রতিবেদন চেয়েছেন এবং বলেছেন যে, মানব পাচারের এই জঘন্য কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই বিষয়ে কোনও ধরণের অবহেলা সহ্য করা হবে না। মানব পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরে বড় অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে পাকিস্তান। এর থেকে বেরিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারছে না দেশটি। যে কারণে দেশ ছাড়ছেন পাক যুবকরা।
রিপোর্ট বলছে, গত তিন বছরে কমপক্ষে ১০ লক্ষ দক্ষ মানুষ পাকিস্তান ছেড়েছেন। এর মধ্যে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে হিসাবরক্ষক ও ম্যানেজারসহ নানা পেশার লোক রয়েছেন। বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এর বাইরে নিম্নবিত্ত যুবকরাও কাজের খোঁজে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপ পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছেন।