Published : Thursday, 26 December, 2024 at 7:17 PM
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ ও উৎস খুঁজে বের করতে জ্যেষ্ঠ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে এদিন একটি জরুরি বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এই কমিটির সভাপতির দায়িত্বপালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। সদস্য হিসেবে থাকবেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, পুলিশের আইজিপি, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (সদস্য সচিব), সদস্য সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ, এবং বুয়েট থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ, উৎস এগুলো খুঁজে বের করে আগামী তিন দিনের মধ্যে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট সরকারকে দেবে। প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো না গেলেও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন গণমাধ্যমকে পুরোটাই জানানো হবে। এবং যতদ্রুত সম্ভব এই প্রতিবেদন দেয়া হবে।
অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় দশ ঘণ্টা পর সেই আগুন নেভানো সম্ভব হয়।
দশ তলা ওই ভবনেই অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ৬, ৭, ৮, ৯ এই চারটি তলা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে গেছে।
রাতে অগ্নিকাণ্ডের সময় দশ তলা ওই ভবনের উপরের দিকের একটি ফ্লোর এমাথা-ওমাথা জ্বলতে দেখা যায়। এ অগ্নিকাণ্ডের কারণে নিয়ে অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সন্দেহ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার সকালে এক ফেইসবুক পোস্টে বলেন, “স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল।
“আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে, তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।”
অগ্নি নির্বাপণে অংশ নেওয়া নৌবাহিনীর দলে থাকা সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার মো. আমিনুল ইসলামও বলেছেন, তার কাছে এটা নাশকতা বলে মনে হয়েছে।
“শর্ট সার্কিট থেকে নয়। মনে হল, পরিকল্পিতভাবে লাগছে। মনে হল বিভিন্ন জায়গা থেকে হয়েছে। শর্ট সার্কিট হলে একটা জায়গা থেকে হয়। এক জায়গা থেকে নয়, এটা হয়েছে কয়েকটা জায়গা থেকে।”
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল অবশ্য এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, যেভাবে আগুন ছড়িয়েছে সেটা ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কারণে হতে পারে। এক জায়গা আগুন ধরলে বিদ্যুৎ লাইনের মাধ্যমে সব জায়গা ছড়িয়ে পড়ে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এরকম ঘটতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না করে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন।
উচ্চ পর্যায়ের ওই তদন্ত কমিটি ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সাত সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, সংঘঠিত অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদঘাটন, পেছনে কারো ব্যক্তিগত বা পেশাগত দায় আছে কিনা তা উদঘাটন এবং এ জাতীয় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ছাড়াও ঢাকা মহানগর পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে।