Published : Wednesday, 25 December, 2024 at 9:57 PM
নিজ দেশ মিয়ানমার ফিরে যেতে কক্সবাজারে উখিয়ায় গণসমাবেশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া লাখো রোহিঙ্গা।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) উখিয়া কুতুপালং ১ নম্বর ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঠে রোহিঙ্গা যুবকদের সংগঠন ‘ইসলামি মাহাসা’ নামের একটি সংগঠন এ সমাবেশ আয়োজন করে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সমাবেশ শেষ হয় দুপুর ১টায়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অধিকাংশই রয়েছে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে। নতুন করে অনুপ্রবেশের কারণে সেখানে তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা মিয়ানমারে নির্মম নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে তাদের শরণার্থী জীবনকে খাঁচাবন্দি পাখির জীবনের সঙ্গে তুলনা করেন।
তারা বলছেন, শরণার্থী জীবন খুবই কষ্টের। এই জীবন থেকে মুক্তি পেতে, নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনও বিকল্প নেই।
ধারণা করা হচ্ছে, বিভিন্ন বয়সী প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা সমবেত হয়েছিল এ গণসমাবেশে। সেখানে তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার, মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরাল ভূমিকা দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানরা গত কয়েক দশক ধরেই নিপীড়নের মুখে রয়েছে। আর তাতে অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
মিয়ানমারের সেনাদের হাতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গার দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকেন আশ্রয়ের জন্য। সেসময় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশ প্রথমে রাজি না হলেও পরে মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল। ওই রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরেও পাঠানো হয়।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে ফিরে যেতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সহজ হবে। রোহিঙ্গাদের দাবিসমূহ মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে আমরা ফিরে যাব।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্প্রতি রাখাইন (আরাকান) রাজ্যে আরাকান আর্মির শক্তিশালী অবস্থানের কারণে ফিরতে আরও জটিলতা তৈরি হয়েছে। আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও হত্যা করে যাচ্ছে। এর আগে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার সঠিক ও ন্যায় বিচার হয়নি। রোহিঙ্গা নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. জোবায়ের আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের দাবিগুলো নিশ্চিত করা হলে আমরা স্বেচ্ছায় মিয়ানমার চলে যাব। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে সারা জীবন থাকার জন্য আসেনি। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নিয়েছে, থাকার জন্য জমি দিয়েছে, ঘর দিয়েছে, খাবারের ব্যবস্থা করেছে। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। আমরা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের কাছে সারা জীবন ঋণী হয়ে থাকবো।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মাওলানা রাহমত করিম বলেন, ক্যাম্পের এমন জরাজর্ণী বন্দি জীবন মানুষের জন্য না। এখানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার জন্য রোহিঙ্গারা কৃতজ্ঞ। এখন বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ন্যায়সঙ্গত ফেরতে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
সমাবেশে মাওলানা জহির আহমেদ, কাওয়ালি হামিদ, মাওলানা আব্দুর রশিদ, মাওলানা দিল মোহাম্মদসহ অনেক রোহিঙ্গা আলেম এবং যুবক বক্তব্য রাখেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমিন জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের গণসমাবেশ হয়েছে। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে এ সমাবেশ করেছে।
কক্সবাজারের শরাণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে হানাহানি ও বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বন্ধসহ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।