Published : Thursday, 19 December, 2024 at 2:39 PM
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া তাদের প্রতিবেশী দেশ কিংবা পশ্চিমাদের জন্য কোনও হুমকি নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কার্যত নেতা (ডি-ফ্যাক্টো লিডার) আহমেদ আল-শারা। দেশটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়ার জন্য সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
দামেস্কে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-শারা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাগুলো ছিল পুরোনো শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে। মাঝে অনেক কিছু ঘটেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এখন নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়া উচিত। শোষক ও শোষিত উভয় পক্ষের সঙ্গেই একই আচরণ করা সংগত নয়।
মাত্র দুসপ্তাহ আগে এক আকস্মিক সশস্ত্র অভিযানে আসাদ সরকারের পতন হয়। সেই অভিযানে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আল-শারা। বিদ্রোহী জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান তিনি। পূর্বে আল-শারা পরিচিত ছিলেন 'আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি' নামে।
সাক্ষাৎকারের এ পর্যায়ে এইচটিএসকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার দাবি জানান আল-শারা। তিনি বলেছেন, এইচটিএস সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। আমরা কখনও বেসামরিক মানুষ বা তাদের এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালাইনি। বরং আমরা নিজেরাও আসাদ সরকারের নির্যাতনের শিকার।
আল-কায়েদার শাখা একটি সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল এই দলটি। ফলে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ ও সংস্থার সন্ত্রাসী তালিকায় দলটির নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। পরে অবশ্য ২০১৬ সালে তারা আল-কায়েদার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করলেও অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক তাদের দাবিকে সন্দেহের চোখেই দেখে আসছেন।
আফগানিস্তানের আদলে সিরিয়াকে গড়ে তোলার সম্ভাবনার বিষয়টি নাকচ করে আল-শারা বলেছেন, আফগানিস্তান একটি গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজব্যবস্থা। সেখানে ভিন্ন রীতিনীতি রয়েছে। সিরিয়ায় মানুষের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ আলাদা।
নারী শিক্ষার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ইদলিবে প্রায় আট বছর ধরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। যতদূর জানি, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নারীর সংখ্যা ৬০ শতাংশের বেশি।
সিরিয়ার মদ্যপান অনুমোদন করা হবে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, অনেক বিষয় নিয়ে আমার মন্তব্য করার অধিকার নেই। কারণ, এগুলো আইনি ব্যাপার।
আল-শারা জানিয়েছেন, একটি আইনি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে। তারা সংবিধান প্রণয়ন করবেন। প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও শাসক বা প্রেসিডেন্টকে চলতে হবে।
পুরো সাক্ষাৎকার জুড়ে বেশ শান্ত ছিলেন আল-শারা। বেসামরিক পোশাক পরিহিত এই নেতা তার কথাবার্তা, চালচলনে এইচটিএসের অতীত কট্টরপন্থা পেছনে ফেলে আসার বিষয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাইছেন। তবে অনেক সিরীয় তার বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না।
দেশটির ভবিষ্যৎ কী হবে তা অনেকটাই নির্ভর করবে আগামী কয়েক মাসে নতুন নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের ওপর। তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, তারা আসলে কীভাবে দেশ শাসন করতে চায়।