সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের নাগরিকদের হয় দালাল বানিয়েছেন, নাহয় দাস বানিয়েছেন। সেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। যারাই বিচারের আগে কোনো নির্বাচনের পাঁয়তারা করবে, তাদের জাতীয় শত্রু হিসেবে ধরে নেয়া হবে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগ থানার সামনে জাতীয় নাগরিক কমিটির বিজয় র্যালি শেষে তিনি এসব কথা বলেন। র্যালিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণ করা হয়।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তারা মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছে। তারা বাংলাদেশে গুম, খুনের জন্য দায়ী ছিল। ৭১ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের তরুণ-যুব সমাজ চব্বিশে দেখিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের তরুণরা কখনও ঘুমাতে পারে না। এ দেশে যত আক্রমণ আসুক, আমরা রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করবো। আমাদের সামনে দুটি শত্রু আছে। একটি হলো মুজিববাদী ও আরেকটি হিন্দুত্ববাদী শত্রু। তাদের মোকাবিলা করতে হবে।
জুলাইয়ে গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করাতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এই দুই হাজার শহীদের জন্য দায়ী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আওয়ামী লীগকে বিচারের কাটগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগকে এ দেশে কখনও পুনর্বাসন করতে দেবো না। এ দেশে মুজিববাদকে পুনর্বাসন করতে দেবো না। আমরা বাংলাদেশে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি পুনর্বাসন হতে দেবো না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় মুখ সংগঠক সারজিস আলম বলেন, বাংলাদেশকে জনগণের রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার একাধিকবার সুযোগ এসেছে। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান ধ্বংস করা হয়। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ভারতের কাছে লিজ দেওয়া হয়। মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতের দাস বানিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্র-জনতা সেটা হতে দেয়নি। দাস নয়, আমরা নাগরিক হয়ে উঠবো।
তিনি বলেন, ৪৭ থেকে ৭১, ৭১ থেকে ৯০, ৯০ থেকে ২৪– প্রত্যেকটি সময়ে বাংলাদেশ জনগণের রাষ্ট্র হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল। একাধিকবার সুযোগ এসেছে। ৪৭-এ হয়নি, ৭১-এ শেখ মুজিবুর রহমান পারিবারিক মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বিসর্জন দেন। শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অনেক রক্তের পরে, জীবনের পরে আমাদের সুযোগ হয়েছে নাগরিক হয়ে ওঠার। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে নাগরিক হয়ে উঠতে হবে। এই রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, আমরা পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রকে বলে দিতে চাই, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক হতে হবে সম্মানের, সমতার। আগামীর বাংলাদেশে জনগণের হয়ে নাগরিক কমিটি সাম্য, মানবিক, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র গঠন করবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট খুনিদের প্রতিহত করবো।
এর আগে, বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বাংলামোটর মোড় থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশে বিজয় র্যালি শুরু করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা। পরে র্যালিটি শাহবাগ হয়ে কাঁটাবন, নীলক্ষেত ও পলাশী হয়ে শহীদ মিনারের দিকে যায়। সেখানে অন্য আরেকটি সংগঠনের অনুষ্ঠান চলায় শাহবাগ থানার সামনে গিয়ে শেষ করা হয় র্যালি। বিজয় র্যালিতে ঢাকার বিভিন্ন থানা কমিটি ও উপজেলার কমিটির নেতাকর্মীরা যোগ দেন। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাও যোগ দেন র্যালিতে।
এ সময় তারা তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ; ৭১-এর পতাকা ২৪ দেবে পাহারা; আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে; ৭১ মরে না ২৪ হারে না; ৭১ আমার শক্তি, ২৪ আমার মুক্তি; ২৪-এর শহীদরা লও লও লও সালাম; ফ্যাসিবাদের দিন শেষে, শান্তি এলো বাংলাদেশেসহ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
বিজয় র্যালিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রারাসাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।