তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দারুণ টানটান উত্তেজনাপূর্ণ এক ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে টাইগাররা। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের বিশেষ দিনে ক্রিকেটের মাঠে স্মরণীয় এক বিজয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ১১ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। পরের বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরেছেন অধিনায়ক লিটন দাস।
তবে এক প্রান্ত ধরে রেখে খেলে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। দারুণ সব স্ট্রোকে দলের রান বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন সৌম্য। ব্যাট হাতে এদিন দারুণ সাবলীল মনে হয়েছে সৌম্যকে।
মাঝে আফিফ খেলেছেন ১১ বলে ৮ রানের ইনিংস। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান তোলে বাংলাদেশ। জাকের আলী অনিক ক্রিজে নেমে কিছুটা হাঁসফাঁস করেছেন। ২৭ বলে ২৭ রান করে দলের ৮৭ রানের মাথায় আউট হন জাকের। অন্য প্রান্তে ততক্ষণে ফিফটির খুব কাছে চলে গেছেন সৌম্য।
তবে শেষমেশ ফিফটিটা ছোঁয়া হয়নি সৌম্যর। দারুণ কার্যকরী ব্যাটিংয়ে ৩২ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন সৌম্য। শেষ দিকে ঝড় তোলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দারুণভাবে ফিনিশিংয়ের কাজটা করছিলেন শামীম। সাথে সঙ্গ দিয়েছেন শেখ মেহেদী হাসান। দারুণ পাওয়ারহিটিংয়ে বাউন্ডারি মালা গেঁথে ১৩ অলে ২৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন শামীম, আউট হয়েছেন শেষের আগের বলে।
এছাড়া ২৪ বলে ২৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন শেখ মেহেদী। ১ বলে ২ রান করে টিকে ছিলেন রিশাদ হোসেন। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২টি করে উইকেট তুলেছেন আকিল হোসাইন এবং ওবেদ ম্যাককয়। এছাড়া ১টি করে উইকেট নেন রোস্টন চেইজ এবং রোমারিও শেফার্ড।
জবাব দিতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের ১ রানের মাথাতে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার ব্রেন্ডন কিং, তাকে ফিরিয়ে প্রথম আঘাতটা দিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে নিকোলাস পুরানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন শেখ মেহেদী। ২ রানের মধ্যে হাওয়া ২ উইকেট।
এরপর কিছুটা তাণ্ডব চালিয়েছেন জনসন চার্লস। ১২ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলা চার্লস থেমেছেন দলের ৩৩ রানের মাথায়, তাকেও ফিরিয়েছেন মেহেদী। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৩৬ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হারিয়েছে ৩ উইকেট।
পাওয়ারপ্লের ঠিক পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন মেহেদী। আন্দ্রে ফ্লেচারের পর ফিরিয়ে দেন রোস্টন চেইজকেও। মাত্র ৩৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে যেন অথই সাগরে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এরপর টানা দুই ওভারে আউট হয়েছেন গুডাকেশ মোটি এবং আকিল হোসাইন। মোটিকে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব, আকিলকে আউট করেন রিশাদ হোসেন।
৬১ রানে ৭ উইকেট খতম ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এইটুকু দেখে মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি আজ বাংলাদেশই জিততে যাচ্ছে। তবে না, এত সহজে ম্যাচ জেতা যায়নি। চাপের মুহূর্তে ক্রিজে জুটি বাঁধেন রোমারিও শেফার্ড এবং অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল। সময়ের সাথে সাথে ক্রিজে জমে যান দুজন।
শুরুতে দেখেশুনে আগালেও সময়ের সাথে সাথে রানের গতি বাড়িয়েছেন পাওয়েল-শেফার্ড। দুজনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশও পুড়তে থাকে হতাশার আগুনে। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে দলকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে থাকেন পাওয়েল-শেফার্ড। দুজনের জুটিতে ম্যাচটা বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় ছিনিয়েই নিচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তবে দলের ১২৮ রানের মাথাতে ১৭ বলে ২২ রান করা শেফার্ডকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ম্যাচ আরও জমে যায়। শেষ দিকে কিছুটা সাবধানী ব্যাটিংয়ে রান তুলেছেন পাওয়েল। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১০ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে পাওয়েলকে স্ট্রাইক দেন আলজারি জোসেফ। পরের বলে হাসান মাহমুদের দারুণ এক ডেলিভারি, ডট বল। পরের বলেই পাওয়েলকে কট বিহাইন্ড করে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন হাসান। ম্যাচটা চলে আসে বাংলাদেশের হাতের মুঠোয়।
দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে শেষ ওভারে ২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুঁটিয়ে যায় মাত্র ১৪০ রানেই। ম্যাচটা ৭ রানে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে মাত্র ১৩ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেন শেখ মেহেদী হাসান। ২টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ এবং হাসান মাহমুদ। ১টি করে উইকেট তুলেছেন তানজিম হাসান সাকিব এবং রিশাদ হোসেন।
তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।