শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বাহারি সব সবজিতে পরিপূর্ণ বাজারগুলো। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কমেছে সবজির দাম। প্রায় সব ধরনের সবজির দামই এখন ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে। তবে আলু ও পেঁয়াজের বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। পুরাতন আলুর দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকায় কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষদের।
শুক্রবার (০৬ ডিসেম্বর) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নিউমার্কেট ও কারওয়ানবাজারসহ বেশকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
দেশজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। রাজধানীতেও ধীরে ধীরে জেঁকে বসছে শীত। সঙ্গে বাজারে বাড়ছে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ, আর কমতে শুরু করেছে দামও।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ৬০-৭০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, শালগম ৪০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৫০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৫০ টাকা, নতুন আলু ১০০-১২০ টাকা, পুরাতন আলু ৭৫-৮০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।
দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৬০-৮০ টাকায়। এছাড়া, বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা, লাউশাক ৫০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়তে শুরু করায় দাম কমছে। সপ্তাহ ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে কেজিপ্রতি দাম কমেছে ১০ টাকা পর্যন্তও।
সবজির দাম কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভোক্তাদের মধ্যে। তারা জানান, শাক-সবজির দাম কমলেও মাছসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার এখনও চড়া।
কামাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন,সবজির দাম কমছে -- এটি ভালো খবর। তবে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১৪ শতাংশ। অন্যান্য পণ্যের দামও কমতে হবে। নাহলে মধ্যবিত্তদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়ে
এদিকে, মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের চড়া দামেই। কোনো কোনো মাছের দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমলেও, কোনোটিতে আবার ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় মাছের সরবরাহ কম। এতে দাম ওঠানামা করছে।
বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
অস্থির ইলিশের বাজারও। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে দাম না বাড়লেও কমার খবর নেই। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কেজিতে ৩০০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০-১৫০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, ইলিশের সরবরাহ কম। তাই দাম কিছুটা চড়া। আর ইলিশের বাড়তি দামের কারণে কমছে না অন্যান্য মাছের দামও।
অস্থির তেল-মসলার বাজারও। দুই দফা শুল্ক কমানোর পরও ভোজ্যতেলের বাজারে আসেনি স্বস্তি। উল্টো বেড়েছে অস্থিরতা। বর্তমানে বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৮-১৭০ টাকা, আর খোলা পাম তেল ১৫৭-১৬০ টাকা। আর এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাজার থেকে উধাও ১ ও ২ লিটারের বোতল। কোথাও কোথাও ৫ লিটারের বোতলজাত তেলের বোতল খুলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দু-একটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যাও মিলছে, সেটিও পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম খোলা তেলেরও। বেশ কিছুদিন ধরে সয়াবিন না দিয়ে ক্যানোলা ও সানফ্লাওয়ার তেল সরবরাহ করছে ডিলাররা।
এদিকে, আমদানি কমের অজুহাতে ফের বাড়তে শুরু করেছে এলাচের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এছাড়া বাজারে দারুচিনি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, জিরা ৬৫০-৭০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা ও তেজপাতা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামও চড়া। বর্তমানে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আর আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। এছাড়া কেজিতে আদা বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৬০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত-বাংলাদেশ উত্তেজনায় আমদানি কমেছে ভারত থেকে। এতে সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়ায় দাম বেড়েছে পেঁয়াজ ও এলাচসহ অন্যান্য মসলার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমদানি বাড়বে। তখন আবার দাম কমতে শুরু করবে।
তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি, গরু-খাসি ও ডিমের দাম। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
এদিকে, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
আর বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০-২৫০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।
বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন চাল। এতে কমেছে নতুন আটাইশ চালের দাম। বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৫-৫৭ টাকা। তবে পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, পুরাতন আটাইশ ৬০-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।
আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।