যার গ্রেপ্তার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত উত্তেজনার পারদ চড়ছে, সেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিনের আবেদনের শুনানি পিছিয়েছে, যার মানে আরও প্রায় এক মাস কারাগারেই থাকতে হবে তাকে।
মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের চট্টগ্রামের আদালতের এই সিদ্ধান্তের খবর ফলাও করে এসেছে ভারতের সংবাদ মাধ্যমে। সেখানে চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবীর না থাকার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবারের অনলাইন সংস্করণে সবার ওপরেই ছিল এই খবর। শিরোনাম ছিল- “মিলল না জামিন, চিন্ময়ের হয়ে দাঁড়াতে চাইলেন না কোনও আইনজীবী, আরও এক মাস চট্টগ্রামের জেলে!”
প্রতিবেদনে চিন্ময়ের এক আইনজীবীর ওপর আক্রমণের খবরও দেয়া হয়েছে কলকাতার এক ইসকন নেতার বরাতে।
বলা হয়েছে, ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমণ দাস সোমবার রাতে অভিযোগ করেছেন, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর উপর হামলা হয়েছে এবং তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
কলকাতার আরেকটি দৈনিক আজকাল তাদের অনলাইন সংস্করণে গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করেছে এই খবর। তাদের শিরোনাম- “আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা, কেউ হাসপাতালে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন মামলার শুনানি ফের আগামী বছর।’’
এনডিটিভির এই সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিও রাখা হয় তাদের ওয়েবসাইটের শীর্ষ খবরে। তার শিরোনামেও চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবী না থাকার তথ্যটি রয়েছে। সেই সঙ্গে শুনানি এক মাস পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
হিন্দুস্থান টাইমস তাদের ওয়েবসাইটে শীর্ষ খবর করেছে এটি। তাদের শিরোনাম- “বাংলাদেশ : গ্রেপ্তার হিন্দু সাধু চিন্ময়ের পক্ষে কোনও আইনজীবী নেই, শুনানি পিছিয়েছে।”
ইন্ডিয়া টুডে ইসকনের বরাতে চিন্ময়ের আইনজীবীর ওপর হামলার খবর প্রকাশ করেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ঢাকা-দিল্লি কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদকারী ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় ব্রহ্মচারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দূরত্ব আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশে যেমন ভারতবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, তেমননি ভারতেও চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিষোদগার করছে। সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনেও হামলা হয়, পতাকা দেওয়া হয় পুড়িয়ে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমে এই সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে অপ্রচার করছে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন অভিযোগও তুলেছেন।
এই উত্তেজনার মধ্যেই মঙ্গলবার শুনানির নির্ধারিত দিনে চিন্ময়ের জামিন আবেদনটি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালতে ওঠে।
এই জেলারই হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়। অগাস্টে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ‘সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ ব্যানারে গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সমাবেশের সংগঠক ছিলেন তিনি। ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’র মুখপাত্রের দায়িত্বও তিনি পালন করছিলেন।
চিন্ময় এক সময় ইসকনের মুখপাত্র থাকলেও সম্প্রতি হিন্দু সমাবেশ নিয়ে আলোচনার মধ্যে তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২৫ অক্টোবরের সেই সমাবেশের দিন চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপরে ইসকনের গেরুয়া রঙের আরেকটি পতাকা ওড়ানোর অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে ৩০ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়।
সেই মামলায় চিন্ময়কে গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে চট্টগ্রামের আদালতে নিলে তার অনুসারীরা বিক্ষোভ শুরু করলে বাধে সংঘাত। তখন হামলায় নিহত হন একজন আইনজীবী।
চিন্ময়কে সেদিনই কারাগারে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার শুনানির দিনেও তাকে আদালতে আনা হয়নি। আইনজীবী ও আসামির অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলাম পরবর্তী শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি দিন ঠিক করেন।