২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৪৯ জনকে সাজা দিয়ে যে বিচার করেছিলেন বিচারিক আদালত, সেটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ কথা জানান তিন আসামির আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি বলেছেন, বিচারিক আদালতের বিচারটা অবৈধ বলা হয়েছে রায়ে। বিচারিক আদালতে আইনের ভিত্তিতে বিচারটা হয়নি।
মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এ রায় দেয়া হয়। ফলে এই মামলায় দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেলেন।
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ে ৪৯ জনকে সাজা দেয়া হয়েছিল। ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। সবার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। রুল যথাযথ ঘোষণা করেছেন। সবাইকে মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের বিচারটা আইনের ভিত্তিতে হয়নি। কোনো সাক্ষীর সঙ্গে কোনো সাক্ষীর বক্তব্যে মিল নেই। শোনা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে রায় দেয়া হয়েছিল।
শিশির মনির বলেন, তারেক রহমান, বাবারসহ সবাইকে এই মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। যাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছিল, তা নির্যাতনের মাধ্যমে নেয়া হয়েছিল। মুফতি হান্নান দুটি জবানবন্দি দিয়েছেন। দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে সাজা দেয়ার নজির নেই। এই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করেন তিনি। এজন্য এর আইনগত মূল্য নেই। দ্বিতীয় অভিযোগপত্র দায়রা আদালতে দাখিল করা হয়। দায়রা আদালত এটি আমলে নিয়েছেন। আইন অনুযায়ী তিনি (দায়রা আদালত) এটা করতে পারেন না। এ জন্য এই অভিযোগ আমলে নেয়ার ভিত্তিতে যে সাজা দেয়া হয়েছে, তাকে অবৈধ বলেছেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ঘটনায় করা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
আইনজীবীরা বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর হাইকোর্টে গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।