Published : Thursday, 14 November, 2024 at 10:01 PM
এ দেশের চারদিকে কোনো বন্ধুরাষ্ট্র নেই বলে মন্তব্য করে আর কোনো দেশ যাতে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই বিচারকের স্মরণ সভায় এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় আসিফ নজরুল ২০০৫ সালে ঝালকাঠিতে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই বিচারপতি জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদকে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত স্মরণ সভায় ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, কোনভাবেই উগ্রবাদকে গ্রহণ করা হবে না। এদেশের চারদিকে কোনো বন্ধু রাষ্ট্র নেই, যা ঘটে তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরা হয়।
প্রয়াত দুই বিচারককে স্মরণ করে ড. আসিফ নজরুল বলেন, জঙ্গিবাদ কত ভয়াবহ। এখানে আমাদের দুটি শিক্ষা আছে। জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ কী ভয়ংকর জিনিস। মানুষকে কত যুক্তিহীন অমানুষ ও নিষ্ঠুরে পরিণত করে। আমার মনে হয় না পৃথিবীতে অন্য কোনও কিছু মানুষকে এতটা নিষ্ঠুর মরিয়া বেপরোয়া করতে পারে। জঙ্গিবাদ যেকোনও ধর্মের হতে পারে। এটা আমাদের শিক্ষা দেয় আমরা কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদকে অ্যালাউ করতে পারি না। কোনও অজুহাতেই না। কোনও মোড়কেই না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের চারপাশে তো বন্ধুভাবাপন্ন দেশ নেই। তাদের সবসময় চেষ্টা থাকে বাংলাদেশকে হেয় করা, কোনও একটা ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখা, এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করা।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি দেশের ভালো চাই, মানুষের ভালো চাই, সমাজের ভালো চাই, বন্ধুদের ভালো চাই, সন্তানদের ভালো চাই, আমাদের দেশকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে চাই, বাংলাদেশকে আর কোনও ফ্যাসিবাদ বা ষড়যন্ত্রের মুখ থেকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই জঙ্গিবাদ মৌলবাদ থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করতে হবে, যেকোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, এর সুযোগ নিয়ে আমাদের দেশের সম্ভাবনাকে, আমাদের অগ্রযাত্রাকে যেন কেউ ব্যাহত করতে না পারে, দেশি বা বিদেশি শক্তি।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের এই দিনে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন ঝালকাঠির জেলা জজ আদালতের দুই বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে ও সোহেল আহমেদ। ঘটনার দিন ১৪ নভেম্বর বিচারক সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ে নিজ বাসভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ মাইক্রোবাসে ওঠেন। এরপর অন্য এক বিচারককে নিতে মাইক্রোবাসটি থামে কোয়ার্টারের সামনে। চালক তাদের গাড়িতে রেখে ওই বিচারককে আনতে যান। এ সময় সেখানে অপেক্ষমাণ জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য ইফতেখার হাসান মামুন আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়।
এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সোহেল আহমেদ এবং বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ের। আহত অবস্থায় ধরা পড়ে জেএমবির হামলাকারী সদস্য ইফতেখার হাসান মামুন। এরপর দেশব্যাপী তুমুল আলোড়ন তৈরি হলে একে একে আটক হয় জেএমবির শীর্ষ নেতারা।
ওই মামলায় আদালত ২০০৬ সালের ২৯ মে ৭ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। দেশের বিভিন্ন কারাগারে ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ৬ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।