বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ বা এআই। প্রযুক্তি দুনিয়ায় বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রভাব এত বেশি যে, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এআই বিষয়ে নিয়ম-কানুন তৈরির জন্য কাজ করছে। আর এর লাঘাম টেনে ধরতে প্রথমবারের মতো বড় পদক্ষেপ নিল জাতিসংঘ। মানবাধিকার রক্ষা ও অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে এআই নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে প্রথম বৈশ্বিক রেজোলিউশন বা প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
এ প্রস্তাবের আওতায় বিশ্বের সব দেশকে তাদের ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত রাখতে এবং নির্বাচনে কোনো ব্যক্তির পদ হারানোসহ এআইয়ের ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার মতো বিপদ এড়াতে বলা হয়।
নন-বন্ডিং প্রস্তাবটি প্রথমবারের মতো উত্থাপন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে সহ-প্রস্তাবক হিসেবে ছিল চীনসহ বিশ্বের আরও ১২০ টির বেশি দেশ। এআই নিয়ে জাতিসংঘের এ প্রস্তাব পাসকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি এআইয়ের দুনিয়াতে এগিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করবে। এখানে প্রতিটি দেশ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ও ঝুঁকি মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করবে। প্রস্তাবটিকে এআই বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধারাবাহিক উদ্যোগের একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন আশঙ্কার মধ্যে এআই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন জালিয়াতি বা অন্যান্য ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে এ প্রস্তাব তোলা হয়।
প্রস্তাবের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বলেছেন, জাতিসংঘে এ প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতে প্রায় চার মাস সময় লেগেছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড বলেন, আজ, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩ জন সদস্য এক সুরে কথা বলেছেন। পাশাপাশি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে পরিচালনা করার পরিবর্তে, আমরা এআই’কে শাসন করার পথ বেছে নিয়েছি।
পরিসংখ্যান বলছে, এআই ব্যবস্থাপনার অনুপযুক্ত বা বিপজ্জনক নকশা, বিভিন্ন উন্নয়ন, স্থাপনা ও ব্যবহারে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যা মানবাধিকার ও ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতার সুরক্ষা, প্রচার ও উপভোগকে কমিয়ে আনতে পারে।
গেল নভেম্বর কীভাবে এআই’কে অপব্যবহারের হাত থেকে নিরাপদ রাখা যায় সে সম্পর্কে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও বিশ্বের ডজন খানেকেরও বেশি দেশ। যেখানে, বিভিন্ন কোম্পানিকে ‘সুরক্ষা ব্যবস্থা সহ’ এআই ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত উত্থান মানবসভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে- বেশিরভাগ আমেরিকান এমন আশঙ্কাই করছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান উদ্বিগ্ন। তবে এটা শুধু আমেরিকানদের কথা না। বিশ্বব্যাপী অনেক বিশেষজ্ঞও মনে করেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
যদিও বিশেষজ্ঞদের এমন মন্তব্য ও শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মেটা বিজ্ঞানী ইয়ান লেকান। তিনি এটিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। বিশ্ব দখল করে ফেলবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, হানা দেবে চাকরির বাজার, কেড়ে নেবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এটা মানতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, কম্পিউটার মানুষের চেয়ে বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে এখনো অনেক বছর বাকি। আর আপনার কাছে অনিরাপদ মনে হলে এটা তৈরি না করলেই পারেন।
গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে নিরাপদ রাখতে প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এআই আইন তৈরির বিষয়ে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে বলা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারা এ মাসে এআই প্রযুক্তি তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নিয়ম নিয়েও কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।