বিদ্রোহীদের তৎপরতায় হামলা, সংঘর্ষে আবার অশান্ত হয়ে উঠছে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মনিপুর।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাজ্যের জিরিবাম জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে ১১ জন কুকি বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি, এই বন্দুকযুদ্ধে নিহতেরা সবাই বিদ্রোহী। তাদের ছোড়া গুলিতে সিআরপিএফের এক জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
পুলিশের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন বলছে, নিহতেরা কুকি জনগোষ্ঠীর সদস্য। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে তারা প্রথমে বড়বেকরা মহকুমা সদরের থানায় হামলা চালায়। এর পরে কিছু বাড়িঘর ও দোকানে লুটপাট চালিয়ে জাকুরাডোর করংয়ের রাস্তায় সিআরপিএফের ওপর হামলা চালায়। এর পরেই শুরু হয় দু’পক্ষের গোলাগুলি। ঘটনার পর এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
জাতিগত সহিংসতায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের মণিপুর রাজ্য। গত বৃহস্পতিবার রাজ্যের জিরিবাম জেলায় ধর্ষণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় এক নারীকে। এর জেরে শনিবার আরেক নারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, মণিপুরে স্থানীয় সময় শনিবার বিকেলের দিকে বিষ্ণুপুর জেলায় মেইতেই সম্প্রদায়ের এক নারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিন সন্তানের মা ওই নারীকে একটি ধানের খেতে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে পুলিশকে জানিয়েছেন তাঁর স্বামী। পুলিশ জানিয়েছে, কুকি জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র ব্যক্তিরা ওই নারীকে হত্যা করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম মণিপুরের জিরিবাম জেলায় হামর সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণের পর জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। তিনিও তিন সন্তানের মা ছিলেন। ফলে হত্যার ঘটনা দুটি একটি অপরটির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে।
হামর, জোমি ও কুকি–এই তিন জাতিগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে ‘জো’ বলা হয়। অনেক সময় এই তিন গোষ্ঠীসহ অন্য আরও ছোট গোষ্ঠীকে মিলিয়ে শুধু আদিবাসী বা কুকি বলে চিহ্নিত করা হয়। মণিপুরে আদিবাসীদের মধ্যে কুকিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
মণিপুরের নিচু উপত্যকা অঞ্চলের অধিকংশ গ্রাম এখনো পর্যন্ত কুকিসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে মেইতেই অঞ্চলে কাউকে হত্যা করা হলে কুকি অঞ্চলে প্রতিহিংসার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। দুই পক্ষের সংঘাতে প্রাণ যাচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষের।
গত বছর মে মাস থেকে ধারাবাহিক সংঘাতে মণিপুরে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছে। গৃহহীন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।