শিরোনাম: |
বাংলাদেশে অরেঞ্জ বন্ড প্রবর্তনের বিষয়ে আলোচনার জন্য সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট এক্সচেঞ্জ (আইআইএক্স) কর্মকর্তারা। বিশ্বের অনেক দেশে প্রচলিত হলেও অরেঞ্জ বন্ডের মত অর্থায়ন বাংলাদেশে এবারই প্রথম। এই নতুন ধরনের উদ্যোগ ১ বিলিয়ন পর্যন্ত টেকসই বন্ড ইস্যু করে লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করবে।
‘রিবিল্ডিং এন ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ উইথ অরেঞ্জ বন্ড’ শিরোনামে হওয়া এই পরামর্শ সভাটি সুইডিশ সরকারের অর্থায়নে, ইউএনডিপি’র গভর্নেন্স অফ ক্লাইমেট চেঞ্জ ফাইন্যান্স (জিসিসিএফ) প্রোগ্রামের অংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২.০ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে অরেঞ্জ বন্ডও একটি স্থিতিস্থাপক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে।
তিনি আরো বলেন, গার্মেন্টস, সবুজ অবকাঠামো এবং কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলিতে ১ বিলিয়ন বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক বাস্তুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলার জন্য আমরা কাজ করছি। এটা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের পথ সহজ করবে। আমাদের সফলতা ভবিষ্যতে অন্যদেরকেও একসাথে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোঃ খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা যখন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কথা বলি, এখনও পর্যন্ত আমরা মূলত প্রশমনের দিকে বেশি নজর দিই। কিন্তু আমাদের এই সমস্যা মোকাবিলায় অভিযোজনের দিকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোঃ শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী নীতিমালা পরিবর্তনের উপর জোর দিয়ে বলেন, আজকের এই সভা অরেঞ্জ বন্ডের জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উপযোগী করে তোলার একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই উদ্যোগকে সফল করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে যুক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার করতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে, প্রশমন এবং অভিযোজন এই উভয় বিষয়কেই গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখতে আমাদেরকে একাধিক উৎস থেকে জলবায়ু তহবিল সংগ্রহ করতে হবে যার মধ্যে ক্লাইমেট ফাইন্যান্সে বেসরকারী খাতের সম্পৃক্ততা এবং ক্লাইমেট রিস্ক ইনস্যুরেন্স, ইসলামী ফাইন্যান্স, থিম্যাটিক বন্ড, ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্স এবং কার্বন ট্রেডিংয়ের মতো বিষয় রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ, যা শুধু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নয়, কর্মসংস্থান তৈরিতেও সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে ‘জলবায়ু এবং জেন্ডার: ইন্টারসেকশন এবং ইন্টারভেনশনস’ বিষয়ে বক্তৃতা করেন সিডা’র হেড অফ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এবং ডেপুটি হেড অফ মিশন মারিয়া স্ট্রিডসম্যান এবং এই উদ্যোগের বৈশ্বিক তাৎপর্য তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ।
আই আই এক্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ডুরীন শাহনাজ এই উদ্যোগের কৌশলগত জায়গার ওপরেও আলোকপাত করেন। তিনি মনে করেন, অরেঞ্জ বন্ড শুধুমাত্র একটা অর্থনৈতিক সমাধান না, বরং এই অঞ্চলে এটি লিঙ্গ সমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকান্ড, জলবায়ু পরিবর্তনের কাজের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য অরেঞ্জ বন্ডের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন সরকার, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সদস্য এবং বেসরকারি খাতের প্রধান প্রতিনিধিরা। তারা মনে করেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে কাজ করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতেও সাহায্য করবে।
দেশসংবাদ/এমএম/এমএইচ
আপনার মতামত দিন
|