কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া ১৫টি ডিঙি নৌকাসহ ২০ জেলেকে মিয়ানমারে ধরে নিয়ে গেছে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠি আরাকান আর্মি।
মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা নাইক্ষ্যংদিয়ার কাছাকাছি এলাকা থেকে এদের ধরে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম।
তিনি জানান, দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা এবং ১৩টি ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে মোহনায় গিয়েছিলেন এই জেলেরা। আরাকান আর্মির সদস্যরা বড় ট্রলারে এসে অস্ত্রের মুখে জেলেদের ধরে নিয়ে যায় বলে আশপাশের অন্য জেলেরা জানিয়েছেন।
যে জেলেদের ধরে নেওয়া হয়েছে তাদের সবার বাড়ি টেকনাফের সাবারং ইউনিয়নের শাহাপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায়। তবে সবার নাম এখনও জানা যায়নি।
টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরীও ঘটনাটি শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
ওপারে দিনভর বিস্ফোরণের শব্দ
মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপার থেকে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে। যার জের ধরে টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মাটিতেও কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বিকট শব্দ শোনা গেছে। ওই সময় আকাশের অনেক উঁচু থেকে চক্কর দিতে দিতে যুদ্ধবিমান থেকে মর্টার শেল বা বোমা বর্ষণ করতেও দেখা যায়।
টেকনাফ পৌরসভার জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, সোমবার রাত থেকে গোলাগুলির ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ বেড়েছে। দিনে কিছুটা কম বিকট শব্দ শোনা গেলেও রাতে বেশি পাওয়া গেছে। রাতে আমাদের শিশুরা ভয় পাচ্ছে। জানি না কবে এই শব্দ থেকে মুক্ত পাব।
সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ার বাসিন্দার মোহাম্মদ হেলাল বলেন, মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে বোমার বিকট শব্দে কাঁপছে আমার বাড়ি। এরকম শব্দ কোনোদিন শুনি নাই। মনে হয়েছি আমার বাড়ি ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারি না।
মিয়ানমারের চলমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানালেন সাবরাং ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ।
ইউএনও জানালেন, বাংলাদেশ থেকে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেলেও এটি মূলত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত। তবে এ পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।