পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত স্পেন। গত মঙ্গলবার দেশটির দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতে আকস্মিক এই বন্যার কবলে পড়ে দেশটি। বন্যায় শহর ও রাস্তাগুলো প্লাবিত হয়েছে, নদীগুলোর তীর উপচে পড়েছে পানি এবং হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎ ও পানি সংকটে ভুগছে।
এতে অন্তত ১৫৮ জন নিহত এবং কয়েক ডজন মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। বহু মানুষ তাদের ভবনের বেজমেন্ট এবং নীচ তলায় আটকে পড়েছিল।
বন্যার পানিতে ডুবে গেছে অনেক এলাকার রাস্তা-ঘাট ও বাড়িঘর। অনেক মানুষ বাড়ির ছাদ, গাড়ির ছাদ, সেতু বা গাছে উঠেও প্রাণ বাঁচিয়েছেন। জরুরি সেবার কর্মীরা এখনও আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে লড়ছেন। মৃতদেহ উদ্ধার এবং ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার জন্য অভিযান চলছে।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশ। ভ্যালেন্সিয়া ও আশেপাশের এলাকায় প্রাণহানি হয়েছে বেশি। এর আগে ১৯৭৩ সালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কমপক্ষে ১৫০ জন মারা গিয়েছিল।
সেখানে ২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভ্যালেন্সিয়ার শহর চিভায় মঙ্গলবার মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে এক বছরের সমান বৃষ্টিপাত হয়। সেদিন সেখানে ৪৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া দপ্তর, যা শহরটির প্রায় এক বছরের বৃষ্টিপাতের সমান।
এমন অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট আকস্মিক পানির প্রবাহ রাস্তা ও হাইওয়েগুলোকে নদীতে রূপান্তরিত করে। সেতুগুলোও ডুবে যায়। ডুবে যায় বাড়ি-ঘর সহ সব ভবন। এতে মঙ্গলবার রাতে লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তা দিয়ে সুনামির ঢেউয়ের মতো পানি প্রবাহিত হয়েছিল। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এক মিটারের বেশি উঁচু পানির ঢেউ তৈরি হয়। পানির স্রোত অনেক বাড়ির দেয়ালও ভেঙে দেয়। গাড়িগুলো সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
বুধবার দেশটির মধ্য-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কমেছে। তবে আবহাওয়া কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, বৃষ্টি উত্তর-পূর্ব দিকে কাতালোনিয়া অঞ্চলের দিকে চলে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আবহাওয়া সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মানুষকে বন্যার জন্য প্রস্তুত হতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।