Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ বঙ্গভবনের সামনে নিরাপত্তা আরও জোরদার ■ চাঁদাবাজির ৪ মামলা বাতিল হলো তারেক রহমানের ■ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ ■ শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ■ ইসরায়েলি হামলায় গাজা আরো ১১৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু ■ দ্বিতীয় দফা লেবানন থেকে ফিরছেন ৬৫ বাংলাদেশি ■ হঠাৎ খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
তারেক রহমানের দেশে ফেরা যে কারণে জরুরি
Published : Wednesday, 23 October, 2024 at 10:37 AM, Update: 23.10.2024 10:49:23 AM

ড. মোর্শেদ হাসান খান

ড. মোর্শেদ হাসান খান

নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থিতি অতীব জরুরি। প্রাসঙ্গিকভাবে চলে আসে, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে বিচার বিভাগ তাঁর প্রতি যে অবিচার করেছিল, সেটার প্রতিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটিও।

আমরা জানি, জাতির সংকটময় মুহূর্তে রাষ্ট্র ও জনগণের প্রয়োজন হয় দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্ব। যেমন ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে হতাশায় নিমজ্জিত দেশের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। যেমন স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আপসহীন সংগ্রামে জাতিকে একতাবদ্ধ করেছিলেন খালেদা জিয়া। 

যে কারণে জিয়াউর রহমান প্রবর্তিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ সব আক্রমণ ও অপপ্রচার মোকবিলা করে টিকে রয়েছে। এই জাতীয়তাবাদ আমাদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে। আর তারেক রহমান বর্তমানে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক।

আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে রাষ্ট্র, সরকার, দল ও দলীয় প্রধান মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগপ্রধান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত খেয়ালখুশিতেই সবকিছু পরিচালিত হতো। ফলে রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল এবং রাষ্ট্র মাফিয়া গোষ্ঠীর ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছিল। আমূল সংস্কার ব্যতীত এর থেকে পরিত্রাণের বিকল্প নেই। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের সংকল্প নিয়ে আমরা আশাবাদী। 

সবার মনে থাকার কথা, ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে ৩১ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত জতীয় সরকারের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছিলেন। এখানে বিবেচ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার বনাম নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের সংস্কারের মধ্যে কোনটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও টেকসই হবে?

ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলেই প্রমাণ হয়েছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে প্রতিষ্ঠিত আইন, সংবিধান ও প্রচলিত রীতির অকালমৃত্যু ঘটে। সুতরাং দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে এখন থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারে তারেক রহমানের অংশগ্রহণ সমর্থনযোগ্য।

মনে রাখতে হবে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারার মতো নেতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বেশি নেই। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত খালেদা জিয়া অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে একতা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় হাসপাতাল থেকেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর পরে এমন নেতা একজনই আছেন, যাঁর আহ্বানে জাতি সাড়া দেবে, তিনি তারেক রহমান। শত ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ মোকাবিলা করে তিনি বিএনপির মতো ব্যাপক ও বিস্তৃত রাজনৈতিক দলকে অক্ষত ও অটুট রেখেছেন সুদূর লন্ডন থেকে। দেশে উপস্থিতি তাঁর নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় ও ফলপ্রসূ করবে।

বর্তমানে খোদ বিএনপিতেও মতভেদ রয়েছে যে, তারেক রহমান কোন প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরবেন। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের অনুকম্পায় দেশে ফেরা ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতা হিসেবে তাঁর ভাবমূর্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাকি থাকে আন্দোলন অথবা আইনি পথ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁর দেশে ফেরা নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কারণ দেড় দশকের দুঃশাসনে বিপর্যস্ত জাতিকে পুনরুদ্ধারে স্থিতিশীলতাই এখন অগ্রাধিকার। সেই বিবেচনায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা ও রায় হওয়া মামলাগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলার মাধ্যমেই দেশে ফেরা উত্তম। নির্যাতিত সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমান ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়ার পথ দেখিয়েছেন। 

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান ও রায় হওয়া মামলাগুলোর নিরপেক্ষ পর্যালোচনা বিবিসি বাংলাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে এসেছে। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত করার মাধ্যমে তারেক রহমানকে মামলায় জড়ানো হয়েছে, তা বোঝার জন্য মামলাগুলোর বিষয়ে আলোকপাত করছি।

যেমন–বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার প্রথম অভিযোগপত্র ২০০৮ সালে আদালতে পেশ ও বিচারকাজ শুরু হয়। যে ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার নানা অজুহাতে তারেক রহমানের সম্মানহানিতে সক্রিয় ছিল, তারাও এ মামলায় তাঁকে জড়িয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ আদালতে দাখিল করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অবসর থেকে ফিরিয়ে এনে মামলাটিতে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে ৪০০ দিন রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় এবং মামলার পঞ্চম অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়। 

এরপর মুফতি হান্নান নিজে সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এমনকি তারেক রহমানের আইনজীবীও মুফতি হান্নানকে জেরার সুযোগ পাননি। অন্য কোনো সাক্ষীও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেননি। আর সিলেটে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তড়িঘড়ি করে মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দের দলীয় আনুগত্য নিয়ে এখন আর কোনো দ্বিধা নেই। ২০০১ ও ২০০৮ সালে নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা এবং ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়নে ডামি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর কাহার আকন্দ এখন যথারীতি পলাতক।
 
গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বিচারক মোতাহার হোসেনের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সেখানে তিনি বিস্তারিত বলেছেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সেই মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ অনুযায়ী সাজা দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দিতেই লিখিত রায়ে স্বাক্ষর করার চাপ ছিল। কিন্তু নিজের বিবেক ও বিচারক হিসেবে শপথের তাগিদে তিনি রাজি হননি। ফলে ওই বিচারক দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বিচারিক আদালতে বেকসুর খালাস পাওয়ার পরও হাইকোর্ট তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন; যদিও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ‘ওয়ান ইলেভেন’ সরকার যে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির ঢালাও অভিযোগ এনেছিল, তার কিছুই আদালতে প্রমাণ করা যায়নি। বরং এখন বের হয়ে আসছে ভয়-ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর আছে ‘অনুভূতিতে আঘাতপ্রাপ্ত’ কিছু দলীয় ব্যক্তির মামলা এবং সরকারের করা কিছু ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলা। 

এখনও কিছু মানুষের মনে তারেক রহমানকে নিয়ে সন্দেহ ও দ্বিধা কেন? আমার অনুরোধ, অমূলক সন্দেহের বশে উপসংহার না টেনে ব্যক্তি তারেক রহমান ও তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভালোভাবে অবহিত হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য মর্যাদা প্রদান করুন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দানা বাঁধার আগে থেকেই তিনি নিরপেক্ষ নির্বাচন, জাতীয় ঐক্য ও রাষ্ট্র সংস্কারের নিরলস দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমন রাজনৈতিক নেতাকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনতে না পারলে সেটা হবে জনআকাঙ্ক্ষার অবমূল্যায়ন এবং গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের অবমাননা।

লেখক: অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহাসচিব, ইউট্যাব, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, সদস্য, বিএনপি মিডিয়া সেল।

দেশসংবাদ/এএসএম


আপনার মতামত দিন
তারেক রহমানের দেশে ফেরা যে কারণে জরুরি
ড. মোর্শেদ হাসান খান
Wednesday, 23 October, 2024
শ্রদ্ধা হে মমতাময়ী মা
অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান
Wednesday, 11 September, 2024
বর্ণবৈষম্য এখন মহামারি!
বেলাল হোসেন রাজু
Friday, 14 June, 2024
শুভ জন্মদিন : সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা
প্রফেসর ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী
Sunday, 27 September, 2020
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক
এফ. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: [email protected]
up