নয় বছর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। শুরু থেকেই তার পরিবার ও দলের অভিযোগ ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম হয়েছেন তিনি। এর ৬২ দিন পর একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। তখন ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করছিলেন।
নানা ঘটনা পরিক্রমার পর গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ভারত থেকে ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফেরেন সালাউদ্দিন আহমেদ। ওই মাসেই দেশে প্রথমবারের মতো গঠিত হয় গুম কমিশন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সেই গুম কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিজের গুমের বিষয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা।
কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জমা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সালাউদ্দিন বলেন, গুম-খুনের মূলহোতা যারা তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দেশ থেকে চিরদিনের জন্য গুম-খুনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
নিজের গুমের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে লিপিবদ্ধ করতেই গুম কমিশনে এসেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার গুমের বিষয়ে আপনারা সবই জানেন। ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ১০ তারিখ রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী পরিচয়ে আমাকে উত্তরার একটি বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নেওয়ার পর ৬১ দিন গুম ছিলাম। এরপর আমাকে অন্য একটি দেশে পাচার করে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি।
এসব বিষয়ে গুম কমিশনের কতটুকু এখতিয়ার আছে তা জানেন না উল্লেখ করে সালাউদ্দিন বলেন, আমি তাদের জানিয়েছি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করব। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জিয়া আহসান, বেনজীর আহমেদ ও তারেক সিদ্দিকী গুম-খুন করেছেন। তারাসহ গুম-খুনের মূলহোতা যারা তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত যারা পাশের দেশে পালিয়ে আছে, তাদের আইনের আওতায় আনতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ভারতে যখন সালাহউদ্দিনকে আটক করা হয় তখন তার কাছে ছিল না কোনও নথিপত্র। ফলে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।
সেই মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন এবং আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এরপর ওই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য ভারতের আসাম রাজ্যের কাছে আবেদন করেছিলেন।