মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মির সঙ্গে জান্তা বাহিনীর লড়াই চলছে। আর সেই লড়াইয়ের তীব্রতায় কেঁপে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী টেকনাফ। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের আকাশে চক্কর দেয়া যুদ্ধবিমান, এপারে তৈরি করছে আতঙ্ক।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পান কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের লোকজন। সারা দিন মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়।
এর আগে সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভোর ৪টা থেকে টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে শোনা যায়। মিয়ানমারের মংডু শহরকেন্দ্রিক চলছে এই গোলাগুলি। সারা দিন মিয়ানমারের আকাশে চলে যুদ্ধবিমানের চক্কর। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ, আরাকান আর্মির পাল্টা হামলা আবারও তীব্র হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের লোকজন জানান, এক সপ্তাহ বিরতির পর সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। ওই সময় দেখা গেছে আকাশে যুদ্ধ বিমানের চক্করও। সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা না গেলেও, দিবাগত রাত ১টা থেকে আবারও শুরু হয় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ, যা মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময় মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধবিমানের চক্কর দেখা গেছে। বিমানের চক্করের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে আসে বিকট শব্দ। এতে কাঁপছে টেকনাফের সীমান্ত এলাকা।
সীমান্তের লোকজনের দেয়া তথ্যমতে, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাং এর পূর্বে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। এটি টানা সংঘাতে এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এলাকাটি পুনর্দখলের জন্য মিয়ানমারের জান্তা বিমান হামলা চালাচ্ছে। এতে ওপারের রোহিঙ্গাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্কও। এছাড়া মংডু শহরের নাফ নদী দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালের মোহনায় কিছু মানুষ জড়ো হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
সাবরাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর হোছাইন জানান, টানা এক সপ্তাহ বিরতির পর সোমবার থেকে আগের মতোই বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। এখন তা আরও বিকট হচ্ছে। সীমান্তের ওপারে যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ করছে; ফলে টেকনাফের ঘরবাড়িও কাঁপছে।
সীমান্তে আগের তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা অনেকটা কমেছে উল্লেখ করে টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা রোহিঙ্গাদের আমরা প্রতিহত করছি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে।