বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সরকার পতন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মেডিকেল বা জরুরি ভিসা বাদে অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না ভারত সরকার; এর মধ্যে আবার ৫ ভিসা আবেদন কেন্দ্রে সীমিত পরিসরে কাজ চলায় মেডিকেল ভিসাপ্রত্যাশীদের অনেকে পাচ্ছেন না ভিসা আবেদন জমা দেয়ার অ্যাপয়েন্টমেন্ট। ফলে জটিল রোগ নিয়ে ভারতে চিকিৎসা করাতে আগ্রহী রোগী ও স্বজনরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। সূত্র : বিডি নিউজ ২৪
আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পর কারফিউ জারি হলে ১৮ জুলাই থেকে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হয়। এরপর দৈনিক ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রগুলো বন্ধ অব্যাহত থাকে।
সরকার পতনের দুদিন পর এক ঘোষণায় ইন্ডিয়ান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার (আইভিএসি) জানায়, “অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সমস্ত আইভিএসি বন্ধ থাকবে। পরবর্তী আবেদনের তারিখ এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে এবং পরবর্তী কার্যদিবসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
ওই মাসের মাঝামাঝি সময়ে সীমিত পরিসরে ভিসা আবেদনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। এরপর ১৬ অগাস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাণধীর জয়সওয়াল বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেবল সীমিত পরিসরে জরুরি ও মেডিকেল ভিসা ইস্যু করবে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশন।
এরপর পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার জন্য যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান ভিসাপ্রত্যাশীরা। এমন অবস্থায় নিরাপত্তার কারণে যমুনা ফিউচার পার্ক এবং সাতক্ষীরার ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়।
৩ সেপ্টেম্বর শুধু পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার জন্য ১৬টির মধ্যে ১৩টি ভিসা আবেদনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, রংপুর এবং রাজশাহীর ভিসা আবেদনকেন্দ্র সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করে।
২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্টের এক খবরে বলা হয়, ‘বিক্ষোভ ও হাই কমিশনকে হুমকির’ কারণে এ সময়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের ২০ হাজার পাসপোর্ট ফেরত দিয়েছে হাই কমিশন।
এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর এক ঘোষণায় আইভিএসি জানায়, “ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনায় পাঁচটি স্থানে আইভিএসিগুলি জরুরি মেডিকেল এবং স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লট দেয়া শুরু করেছে।
এছাড়া, এই পাঁচটি আইভ্যাক (বা আইভিএসি) জরুরি ক্ষেত্রে সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্লটও খুলেছে, যেখানে বাংলাদেশি ছাত্র এবং কর্মীদের তৃতীয় দেশে যেতে হবে এবং যার জন্য তাদের ইতোমধ্যে ভারতে বিদেশি দূতাবাসে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে।
ওই ঘোষণায় বলা হয়, “পরবর্তী তারিখে আইভ্যাক তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু না করা পর্যন্ত এই পরিষেবাগুলো সীমিতই থাকবে।”
পরিষেবা সীমিত থাকার কারণে জরুরি মেডিকেল ভিসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের অনেকে প্রত্যাশিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না।
ভিসা আবেদনকারীরা বলছেন, অন্যান্য ক্যাটাগরিতে যাই হোক, ভারতে মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে কাগজপত্র আর হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক থাকলে সহজে ভিসা পাওয়া যায়। কিন্তু এখন মেডিকেল ভিসায়ও জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরের শেষে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বৈঠকে ভিসা জটিলতার প্রসঙ্গ আসে।
পরে উপদেষ্টা বলেছিলেন, “ভিসা নিয়ে একটু কথাবার্তা বলেছি। ভিসা যারা দিচ্ছেন, তাদের অনেকতো ভারতে চলে গেছেন। তাদের সুবিধাটা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। আমরা আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। এখন শুধু স্বাস্থ্যবিষয়ক ভিসা দেয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত তারা ভিসা দেয়া চালু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, খুব বেশিদিন হয়ত সময় লাগবে না।
ভারত সরকারের তথ্যের বরাতে দ্য প্রিন্টের ৩০ সেপ্টেম্বরের খবরে বলা হয়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ১৬ লাখ ভিসা ইস্যু করেছিল ভারত। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ ছিল মেডিকেল ভিসা।
চলতি বছরের অগাস্ট পর্যন্ত ১৫ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিদের জন্য ৮ লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছিল। যার মধ্যে মেডিকেল ভিসা ছিল ২ লাখ।
বিগত বছরগুলোতে পর্যটন ও ব্যবসার পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। দেশে এখন সব ধরনের চিকিৎসার সুযোগ থাকার পরও ভারতের যাওয়ার এই প্রবণতা নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। তবে যারা চিকিৎসার জন্য ভারতকে বেছে নেন, তারা বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নিয়ে আস্থার সংকট এবং ভারতে তুলনামূলক কম খরচে ভালো সেবা পাওয়ার কথা বলেন।