চলতি অর্থবছরের পুরোটা জুড়েই দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। একইসঙ্গে খেলাপি ঋণ ও উচ্চমূল্যস্ফীতিকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি আছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও। এতে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবার ৪ শতাংশে নেমে আসবে। যার ফলে আরও একবছর চাপের মুখে থাকবে দেশের অর্থনীতি।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট' নামের প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এ সময় ওই সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন থেকে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন- বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকনোমিস্ট নাজমুস খান এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
এই প্রতিবেদনে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয়ে উল্লেখ্য করা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এসব কারণে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়বে না বলেও জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।
এছাড়া আর্থিক খাত নিয়ে বলতে গিয়ে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে নানা ধরনের সংকট রয়েছে বিশেষ করে খেলাপি ঋণ অনেক বেশি। সরকারের অনেক প্রচেষ্টার পরও সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদেও হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক আরও উল্লেখ্য করে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ।এর আগে এপ্রিলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি। যদিও চলমান অর্থবছরের বাজেটে সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসের হিসেবে সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কম হবে প্রবৃদ্ধি।
এদিকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে সেটি হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
এ ছাড়া কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখনো ৮৪ দশমিক ৯ শতাংশের মতো এটি অত্যন্ত উচ্চ সংখ্যার কর্মসংস্থান অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।
এ সময় আরও উল্লেখ্য করা হয়, বাংলাদেশে কর্মের বাজোরে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বিদ্যমান গড়মিল একটি বড় সমস্যা। এক্ষেত্রে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষারও বেশ অমিল লক্ষণীয়। প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে এসব বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ওই প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি খারাপ বলেও উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যার তরুণ কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। এদের মধ্যে বিশেষত শিক্ষিত ও শহুরে বেকার বৃদ্ধি পাওয়াটা একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ।