ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি বাহিনী শীর্ষ কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্বের শূন্যতা কাটিয়ে উঠছে গোষ্ঠীটি; নতুন সামরিক কমান্ড গঠন করে যুদ্ধের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র রয়টার্সকে বিষয়টি জানিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স
লেবাননে ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর সবার একটাই প্রশ্ন, সফলভাবে লেবাননে ঢুকে পড়া ইসরায়েলি বাহিনীকে ঠেকাতে পারবে হিজবুল্লাহ? ব্যাপক রকেট হামলায় ধ্বংসযজ্ঞের পরও হিজবুল্লাহর কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অস্ত্র রয়ে গেছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চারটি সূত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর সবচেয়ে বেশি নির্ভুল লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিজবুল্লাহর একজন ফিল্ড কমান্ডারসহ দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর কয়েক দিনের মধ্যেই হিজবুল্লাহর হাইকমান্ড অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর নতুন অপারেশন সেন্টার স্থাপন করতেই মূল্যবান তিন দিন লেগে যায় গোষ্ঠীটির।
ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর নতুন এই কমান্ড সেন্টার সক্রিয় রয়েছে। এর অর্থ হলো হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা এখন চাইলেই দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করতে পারবে। তৃতীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ‘ওয়ার অব অ্যাট্রিশন’ নামে বহুল প্রচলিত যুদ্ধকৌশলে এগোতে চায় হিজবুল্লাহ। এর মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালিয়ে বস্তুগত ক্ষতিসাধন করে শত্রুকে পরাজয় বরণ করতে বাধ্য চায় হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলি থিঙ্কট্যাংক আলমার বিশ্লেষক আব্রাহাম লেভিন বলেছেন, ‘ধরে নিতে হবে, ইসরায়েলি সেনাদের মোকাবিলায় হিজবুল্লাহ ভালোভাবেই প্রস্তুত। তারা অপেক্ষা করছে। এটি মোটেও কোনো সহজ লক্ষ্য নয়।’ ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, এই শক্তিশালী “সশ্রস্ত্র” বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে গুলি করার বা আঘাত হানার সক্ষমতা কেড়ে নেয়নি।’
প্রকাশ না করার শর্তে হিজবুল্লাহর এক ফিল্ড কমান্ডার নাম বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধাদের কেন্দ্রের আদেশ পালন করার ক্ষেত্রে নমনীয়তা আছেন। তাঁরা রণক্ষেত্রে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে সামর্থ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
নতুন কমান্ডকে একটি ‘ছোট সার্কেল’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, নতুন কমান্ড সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করছে।
ইসরায়েলি হামলা নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর হিজবুল্লাহ নতুন কোনো নেতার নাম ঘোষণা করেনি। তবে গোষ্ঠীটির উপপ্রধান শেখ নাইম কাসেম বলেছেন, হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তবে তাদের সক্ষমতা অক্ষত আছে এবং তারা প্রয়োজনে লড়তে প্রস্তুত।
এরই মধ্যে, হিজবুল্লাহ গেরিলা কৌশল অবলম্বন শুরু করেছে। হিজবুল্লাহর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা ইসরায়েলি সেনাদের ওপর গোপনে আক্রমণ করে। হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা তাদের অতর্কিত হামলায় মাইন এবং রাশিয়ান তৈরি কর্নেট অ্যান্টি-ট্যাংক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। এ ছাড়া, ২ অক্টোবর এক বন্দুকযুদ্ধে ইসরায়েলি এক কমান্ডো ইউনিটের পাঁচ সৈন্য নিহত এবং পাঁচজন গুরুতর আহত হয়। তবে ইসরায়েলি বাহিনী এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বৈরুতভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের মোহানাদ হাজি আলি বলেন, তাঁর আশা ছিল, ইসরায়েলি বাহিনী আরও ভেতরে ঢুকবে। প্রশ্ন হলো হিজবুল্লাহ তাদের জন্য কতটা শক্তিশালী বাধা হবে।
লেবাননে হিজবুল্লাহকে পরাজিত করা কঠিন— এমন ইঙ্গিত দিয়ে ক্রিগ বলেন, ‘নিজ মাটিতে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াই করা হিজবুল্লাহর জন্য ডাল-ভাত। এভাবেই তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং বেশির ভাগ প্রতিরক্ষা কৌশল নিজেরাই তৈরি করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় হিজবুল্লাহ। দেশীয় সমর্থক এবং ইরান–সমর্থিত প্রতিরোধ অক্ষের মিত্রদের কাছে আরও স্পষ্ট বার্তা পাঠাতে চায়—তাঁরা এখনো অক্ষত এবং ইসরায়েলের যথেষ্ট ক্ষতি করতে সক্ষম।’