Published : Sunday, 6 October, 2024 at 9:41 PM, Update: 06.10.2024 9:46:19 PM
তিন দিনের ভারি বৃষ্টি এবং ভারতের মেঘালয়ের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে দুই উপজেলার অন্তত ৬০ হাজার পরিবারের প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক। চরম বিপর্যয়ে বন্যাকবলিত মানুষের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী, চলছে উদ্ধার কার্যক্রম।
রোববার (০৬ অক্টোবর) দিনব্যাপী হালুয়াঘাট উপজেলা কৈচাপুর ইউনিয়ন ও নড়াইল এলাকার পানি বন্দীদের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে সেনাবাহিনী। এ দিন ঝুঁকিপূর্ণ বন্যার কবলে আটকে পড়াদের উদ্ধার কার্যক্রম, শুকনো খাবার বিতরণ করে সেনাবাহিনী।
পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদল ও উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় বানবাসী মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছেন। সহযোগিতায় পাশে থাকতে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন টিম।
ধোবাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, 'ইতোমধ্যে রনসিংহপুর, পঞ্চনন্দপুরসহ কমপক্ষে পাঁচ জায়গায় নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। আজ সকালে ও শনিবার রাতে মুষলধারে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে দুটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলার প্রায় অর্ধেক আমন ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, কালিকাপুর জিগাতলা, ঘোঁষগাও, পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার পরিবারের ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
হালুয়াঘাটের ১২ ইউনিয়নের সবকয়টি প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ।
তিনি বলেন, 'ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সার্বিক বন্যা পরিস্থির উন্নতি হয়নি। প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলো হলো-ভবনকড়া, গাঝীরভিটা, কৈচাপুর, নড়াইল ও ধুরাইল। আকস্মিক বন্যায় ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটে রোপা আমনের প্রায় ২০ হাজার একর জমি সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসরিন আক্তার বানু জানান, এ দুই উপজেলায় ৩৮ হাজার ৮০০ একর জমিতে রোপা আমনের চাষ করা হয়েছিল। বন্যায় দুই উপজেলার ১০ হাজার ৮৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানা গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন জানান, বন্যায় অন্তত ৬ হাজার ৮৭৫ মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৎস্য সেক্টরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজিম উদ্দিন বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুই উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানিবন্দী মানুষদের উদ্ধার করার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটটি স্পিডবোড নিয়ে আজ সকাল থেকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।