মাছ চাষ, খিচুড়ি রান্নার পর এবার ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ যাওয়ার খায়েশের পর এরকমই একটি, উন্নতমানের কাঁচা ঘাস (নেপিয়ার) চাষের মাধ্যমে গরুর পুষ্টি উন্নয়ন ও বাড়তি দুধ আহরণ। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের যাচাইবাছাই ছাড়াই ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি নেয়া হয়।
তিনবছর আগে দুর্যোগকালীন গো-খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে নেয়া এই প্রকল্প শুরু হয়, শেষ হওয়ার কথা আগামী ডিসেম্বরে। এই সময়ের মধ্যেই সারাদেশে স্থাপন করা হবে প্রায় ৮ হাজার ৯৭০টি প্রদর্শনী প্লট। অথচ এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ অর্থ বা ৩১ কোটি ৫২ লাখ ১৭ হাজার টাকা। তাই নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় বাড়তি আরও একবছর চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আমজাদ হোসেন ভুইয়া গণমাধ্যেমকে এ বিষয়ে বলেন, তিন বছরে প্রকল্পটি শেষ করা যায়নি, তাই আরও একবছর সময় চাওয়া হয়েছে। তবে এসব ছাপিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে যাওয়ার খায়েশ।
তথ্য অনুযায়ী, এই ঘাস চাষে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে যেতে চান ৩২ কর্মকর্তা। যাতে গচ্চা যাবে সোয়া তিন কোটি টাকা (৩ কোটি ২০ লাখ টাকা)। অথচ এই ঘাস বাংলাদেশে চাষ হয়ে আসছে বহু বছর ধরেই। তাই পুরো ব্যয়কে অযৌক্তিক বলছেন বিশ্লেষকরা।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে গণমাধ্যেমকে বলেন, এর আগেও আমরা দেখেছি প্রজেক্টের কারণে বিদেশে গেছেন সরকারী কর্মকর্তারা, তবে আসার পরেই পোস্টিং হয়ে যায় অন্যত্র বা অবসরে চলে গেছেন। ফলে আসলে আমরা সেখান থেকে খুব একটা সুবিধা অর্জন করতে পারি নি। এ জন্যে আমি মনে করি সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বা ভ্রমণের জন্যে আরেকটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ।
আর টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, আমলাতন্ত্রের মধ্যে একধরণের মানসিকতা তৈরি হয়েছে যে কোন না কোন সুযোগে বিদেশ যেতে হবে। এই বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশ্য প্রশিক্ষণ একদমই না। ঘাস উৎপাদন, মশা মারার প্রশিক্ষণ এগুলোর জন্যে বিদেশ যাওয়াটা শুধু নামে। মূল বিষয়টা হচ্ছে বিদেশ গেলে সে রাষ্ট্রীয় টাকায় প্রমোদ ভ্রমণের সুবিধা পাচ্ছে।
অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বন্ধ ও বিলাসী খাতে অর্থ ছাড়ে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই পরিস্থিতিতে এমন খায়েশে হতবাক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ও।