Published : Sunday, 29 September, 2024 at 12:59 PM
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছে নেপালে। এতে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া এই দুর্যোগে নিখোঁজ রয়েছে বহু মানুষ। নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দেয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ৯৯ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৮ জন নিখোঁজ এবং ১০০ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়।
তবে কাঠমান্ডু পোস্ট তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি, নেপাল পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ফোর্সের সদর দপ্তরের দেয়া তথ্যে নিশ্চিত করেছে দেশটিতে এই দুর্বিপাকে মৃতের সংখ্যা অন্তত ১১২।
মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এই অবিরাম বৃষ্টি আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে পুর্বাভাস আছে। দেশটির রাজধানী শহর কাঠমান্ডুর চারপাশের উপত্যকায় এই বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
নদীগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত হাজার হাজার বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বেশির ভাগ মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ঘর-বাড়ির ছাদে আটকে পড়া লোকজনের ভিডিও ফুটেজ উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
প্রবল বৃষ্টিতে কাঠমান্ডু উপত্যকার প্রায় সমস্ত নদী প্লাবিত হয়েছে। দেশের এই অংশে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।
ভূমিধসে প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। কাঠমান্ডুর পূর্বে ভক্তপুরে ভূমিধসে একটি ভবন বিধ্বস্ত হলে এক সন্তানসম্ভবা নারী ও চার বছরের মেয়েশিশুসহ পাঁচজন মারা গেছে। এদিকে কাঠমান্ডুর পশ্চিমে অবস্থিত ঢাদিং নামের একটি এলাকায় ভূমিধসে চাপা পড়া একটি বাসের ভেতর থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাসটিতে চালকসহ ১২ জন ছিল বলে জানা গেছে।
এদিকে দেশটির রাজধানী শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মাকওয়ানপুরে অল নেপাল ফুটবল ফেডারেশন পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ছয় খেলোয়াড় ভূমিধসে নিহত হয়েছেন। অন্যরা বানের জলে ভেসে গেছেন।
অনেক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম হয়েছে এই দুর্বিপাকে। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকা চারজন দক্ষিণ কাঠমান্ডু উপত্যকার নাকখু নদীর পানির তোড়ে ভেসে যান।
রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও নেপাল জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। অন্তত ২০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরকারের মুখপাত্র পৃথ্বী সুব্বা গুরুং রাষ্ট্রচালিত নেপাল টেলিভিশন করপোরেশনকে জানিয়েছেন, বন্যায় পানির পাইপগুলোও ভেঙে গেছে এবং টেলিফোন ও বিদ্যুতের লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমটির মতে, ১০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের, অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে একত্র করা হয়েছে।
নেপাল সরকার মানুষকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে আহ্বান জানিয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কাঠমান্ডু উপত্যকায় রাতে সড়কভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বর্ষা নেপালে প্রতিবছর এমন ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস নিয়ে আসে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ঘটনা আরও তীব্র হচ্ছে।