Published : Wednesday, 28 August, 2024 at 10:32 AM
কুমিল্লায় প্লাবিত এলাকা যেন হাওড়ে রূপ নিয়েছে। দুচোখজুড়ে শুধুই জলরাশি। জেলার ১৪টি উপজেলায় নতুন করে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কবলিত এলাকাগুলোতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ আর পরনের কাপড়ের।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে একটু সাহায্য, খাবার আর ওষুধ পাওয়ার আশায় সড়কের পাশে ভিড় জমাতে দেখা গেছে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধ নারী-পুরুষদের। কখন আসবে ত্রাণ বোঝাই নৌকা বা ট্রলার, সবার দৃষ্টি সেই দিকে।
কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে হাঁটু থেকে বুক সমান পানিতে। এদিকে দীর্ঘদিন পানিতে ডুবে থাকা কাঁচা ও আধাপাকা ঘরগুলো ভেঙে পড়ছে। এতে ওই ঘরের মানুষগুলোর কেউ খোলা আকাশে নিচে, আবার কেউ এক কাপড়ে আশ্রয় কেন্দ্র বা অন্যের বাড়িতে উঠেছেন।
জেলার ১৪ উপজেলার ১২৫টি ইউনিয়নেই সরকারি হিসেবে পানিবন্দি আছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৪ জন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও ত্রাণ পায়নি এমন মানুষও আছে অনেক। এরই মধ্যে বেড়েছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। তাই বন্যা কবলিত এলাকায় জেলার ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পৌঁছানো জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্যার ভয়াবহতায় দুর্গতরা শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই ভেঙে পড়েছেন। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও খাবারের অভাব এবং আপনজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা মানুষকে বিমর্ষ করে দিচ্ছে।
এদিকে দুর্গত এলাকায় নতুন বিপদ পানিবাহিত রোগবালাই। বিশুদ্ধ পানির এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাবে পানিবন্দি মানুষ এখন চর্ম রোগ, ডায়রিয়া, জ্বর-সর্দিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খাবারের পাশাপাশি এখন ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ভাবিয়ে তুলছে তাদের। অন্যদিকে আছে সাপে কাটা, বিদ্যুতস্পৃষ্ট হওয়া কিংবা কাটা ছেড়ায় চিকিৎসা নিয়ে দুর্ভোগ। তার ওপর আছে গোদের ওপর বিষফোঁড়া ডাকাত আতঙ্ক। কিছু এলাকায় রাতে ডাকাতি হয়েছে, পাওয়া গেছে এমন তথ্যও।
কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা কাজ করছে, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সব এলাকায় যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন তারা গাদাগাদি করে এক জায়গায় অনেকেই থাকেন, যে কারণে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। বন্যা পরবর্তী সময়ে রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব আরও বাড়তে পারে।
কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে মেঘনা, হোমনা আর চান্দিনাসহ তিনটি উপজেলা ছাড়া বাকি ১৪ উপজেলায় প্রায় ১১ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা আরও বেশি।
এদিকে গেলো ১১ দিন যাবত লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে অনেক গ্রাম পানিতে বন্দি রয়েছে। ত্রাণের পরিমাণ কম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানিয়েছে, গোমতী নদীর পানির উচ্চতা কমে বিপদসীমার নিচে এসেছে। তবে এখনও কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। গোমতীর ভাঙনে এখনও বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, দেবীদ্বার এলাকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
বন্যা কবলিত কুমিল্লায় পানিতে ডুবে ও অন্য কারণে প্রাণহানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা গত তিন দিনে চার শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন।