Published : Tuesday, 27 August, 2024 at 12:51 PM, Update: 27.08.2024 1:21:30 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অস্ত্র ও গুলি লুট এবং ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূইয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দাবি নিয়ে থানায় আসতেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় এনায়েতপুর থানার পুলিশের ওপর তার ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারকৃত এক আসামিকে তাঁর দাবি মতো ছেড়ে না দেওয়ায় এবং ওই আসামির বিরুদ্ধে মামলা নেওয়ায় তাঁর নেতৃত্বে ৪৫০-৫০০ জন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারী থানা ঘেরাও করে এবং ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের অপসারণের দাবি করে। তা মেনে না নেওয়ায় তিনি এনায়েতপুর থানা-পুলিশের ক্ষতি করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
অভিযোগপত্রে আরও জানানো হয়, এ অবস্থায় গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হন। এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাড়া-জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘এই থানা আপনাদের সাধারণ জনগণের। আপনারা থানার কোনো ক্ষয়ক্ষতি করবেন না।’ ওসির কথায় ছাত্র-জনতা চলে যায়। পরে ১ নম্বর আসামি এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে এজাহারনামীয় আসামিসহ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার জন দুষ্কৃতকারী দলবদ্ধ হয়ে হাঁসুয়া, দা, লোহার রড, লাঠি, পেট্রলবোমা ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে থানায় হামলা চালায়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষায় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে তারা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুন দেখে পুলিশ সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চুর নেতৃত্বে আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে এসআই তহছেনুজ্জামান, এএসআই ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। একপর্যায়ে আসামিরা থানা ভবন ধ্বংস ও জীবিত পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দশ্যে থানা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ইস্যুকৃত অস্ত্র, গুলি এবং জনসাধারণের জমাকৃত বেসরকারি অস্ত্র-গুলি লুট করে। তারপর লুণ্ঠিত অস্ত্র-গুলি এবং আসামিদের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে থানার ভেতরে ও বাইরে থাকা অফিসার ও ফোর্সকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে।
অভিযোগপত্র অনুসারে, এ সময় থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, রহিজ উদ্দিন খান, প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আব্দুল সালেক, হানিফ আলী থানার পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নিলে আসামিরা সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁদের। অন্য পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষায় পার্শ্ববর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় এক নারী কনস্টেবলকে মারধর, টানা-হ্যাঁচড়া ও শ্লীলতাহানি করে। পরে বিকেলে সেনাবাহিনীর একটি দল থানা এলাকায় পৌঁছে নিহত পুলিশ সদস্যদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এজাহারে থানার যেসব অস্ত্র লুট ও সম্পদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তারও তালিকা দেওয়া হয়। সবকিছু মিলিয়ে এনায়েতপুর থানায় ৪ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।