বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা ফেনী জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বেশিরভাগ দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে পণ্যসামগ্রী। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া মহাসড়কে তীব্র যানজট। আবার গ্রামীণ জনপদের সড়কগুলোও পানিতে ডুবে থাকায় ভেঙে পড়েছে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। এতে দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট।
সেই সংকটের সুযোগে প্রায় সব পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মজুতদারেরা। বিদ্যুৎ ও শুকনো জ্বালানি কাঠ না থাকায় মোমবাতি ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তাই এই দু'টি পণ্যের দামে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার ডাক বাংলো এলাকায় দেখা গেছে, ৫ টাকা দামের মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৫০ টাকায়। ১৪০০ টাকার সাড়ে ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না এই দুটি পণ্য।
তাই, একদিকে যেমন রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না বলে শুকানো খাবার খেয়ে অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাত পার করতে হচ্ছে বানভাসি মানুষগুলোকে।
চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, ডিম, লবণের পত পণ্যের সরবরাহ নেই বললেই চলে। শাকসবজির সরবরাহ না থাকায় প্রায় সবগুলো বাজারই বন্ধ। এতে, বেশ বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গত ফেনী জেলার ৯০ ভাগ এলাকার সাত লাখেরও বেশি বাসিন্দা। তাই, ত্রাণ হিসেবে পাওয়া শুকানো খাবার চিড়ামুড়ি ও বিস্কুটই একমাত্র ভরসা। অনেকের কপালে আবার তাও জুটছে না।
সোনাগাজি উপজেলার লকুর বাজার এলাকার দোকানি কাসেম বলেন, বাজারের বেশিরভাগ দোকানের মালামাল বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো অবশিষ্ট ছিল, সেগুলো প্রথম দুই দিনে বিক্রি হয়ে গেছে। ফেনী শহরের পাইকারি দোকানগুলো থেকে নতুন পণ্য আনার উপায়ও নেই।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০ কিলোমিটার পথ কোমর সমান পানি ঠেলে গিয়ে ৩-৪ গুণ দামে মাত্র ৫ প্যাকেট মোমবাতি কিনেছি। আসা-যাওয়ার খরচসহ প্রতিটি মোমবাতির দাম পড়েছে ২০ টাকা। আমি ২৫ টাকায় বিক্রি করছি।
তবে, সোহরাব হোসেন নামে ওই এলাকার এক যুবক অভিযোগ করে বলেন, বাজারের দোকানাররা সিন্ডিকেট করে একেকটি মোমবাতি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। যাদের কাছে গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল তারা প্রতি সিলিন্ডার ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছে।
ফেনীর লালপোল এলাকার লালপোল সুপারশপের মালিক মোহাম্মদ শাহ আলমকে বলেন, পুরো ফেনী জেলার পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মহাসড়কে যানজটের কারণে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য আনা যাচ্ছে না।
বন্যার পানিতে বেশিরভাগ পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক দোকানদার তাদের পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে্ন। বন্যার পানি নেমে গেলেও পণ্য সরবরাহ ঠিক হতে অনেক সময় লাগবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী শাহ আলম।
এদিকে, চারদিন বন্ধ থাকার পর শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হলেও গাড়ির গতি খুবই ধীর ছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট পার হতে সময় লাগছিল অনেক।
চট্টগ্রামমুখী লেনে শনিবার রাত পর্যন্ত বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকামুখী লেনে উভয় লেনের গাড়ি চলছিল। মহাসড়ক চালু হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়ায় যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।