ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের সবগুলো ভাঙনের স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে ডুবছে একের পর এক জনপদ। এতে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
ভয়াবহ এই বন্যায় বানভাসি মানুষদের উদ্ধারে বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা থেকে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। উদ্ধারে কাজ করছে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হেলিকপ্টারও।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যা কবলিতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর ছয়টি বোট ফুলগাজী ও পরশুরামে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তাদের আরও ছয়টি বোট এবং কোস্টগার্ড ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। উদ্ধারের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার প্রস্তুত আছে। খারাপ আবহাওয়ার কারণে অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত বন্যায় একজন নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা বলছেন, বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এটি স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এমন বন্যা তারা বিগত ৪০ বছরেও দেখেননি তারা। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় অনেকে চৌকি উঁচু করে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচান। কেউবা ঘরের ছাদে কিংবা টিনের ওপর উঠে রাত কাটিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া বলেন, উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে। বন্যাদুর্গত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তবে পানি এখনো বাড়ছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, উপজেলার চিথলিয়া, সলিয়া ও অলকা এলাকায় অনেক মানুষ আটকা পড়েছেন। রাত থেকে ফায়ার সার্ভিস ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্ধার কাজ চলছে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম কমল জানান, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতো পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
বিজিবির ৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জাননা, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থানে নিয়ে আসছে বিজিবি। উদ্ধার করা জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও জরুরি শুকনা খাবারও বিতরণ করছে বাহিনীটি। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিজিবির উদ্ধার ও অন্যান্য সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।