খুলনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছে। তার নাম মো. সুমন।
শুক্রবার (০২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দীর্ঘ চার ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের সংঘর্ষে নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় শিক্ষার্থী ও পুলিশসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুল ছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদ্রাসা ছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০) নীরবের (২১) নাম জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছে। আহতদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত একজন ছাত্রী, একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, সংঘর্ষকালে পুলিশ ব্যাপক রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নগরীর গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি গাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। খুলনা মহানগরীর মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের বিচার দাবিসহ ৯ দফা দাবিতে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জড়ো থাকে। দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট ঘুরে কেডিএ মসজিদের সামনে দিয়ে গল্লামারীর দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানার সামনে পৌঁছালে মিছিলের পেছন থেকে সোনাডাঙ্গা থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরীর এম এ বারী সড়কের কাচা বাজার এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে রয়েছে। তাদেরও সাজোয়া যান নিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানেও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সংঘর্ষে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
এলাকাবাসীর সহযোগিতা চাইলেন খুবি শিক্ষার্থীরা
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মাইকে ঘোষণা করেন, খুবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় আটকে পড়েছে। আপনারা তাদের উদ্ধার করে খুবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিন। এছাড়া খুবির ৬জন ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে খুলনা ক্যাম্পসে আটকা পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সহপাঠীরা অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে সহযোগিতা চান।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নগরী সাত রাস্তা মোড়সহ দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।