হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মুস্তাক আহমদ নামক এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত মোস্তাক পেশায় একজন শ্রমিক।
শুক্রবার (২ আগস্ট) তার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার। তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বুকে-পিঠে গুলি লেগেছে।
নিহত মোস্তাক আহমেদ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিজিবি) ঠিকাদারের অধীনে লাইনম্যানের কাজ করতেন এবং তার বাড়ি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এর আগে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসার গেট ভাঙচুর ও ১০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও দেওয়া হয় আগুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ এর অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় টাউন হল এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসায়ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং তার বাসার সামনে থাকা দশটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
পরে পুলিশ সেখানে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সহশ্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢুকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপরই সংঘর্ষ বাঁধে।
“পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সহশ্রাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।”
সংসদ সদস্য আবু জাহির বলছেন, ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন প্রবেশ করে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেয়। এছাড়া ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে আমার বাসভবনে। বাসার সামনে থাকা ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল [২ আগস্ট] মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও পরে ছাত্রজনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।