কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যশোর-৬ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (০১ আগস্ট) কে এম আজিজ নামে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে এ আহ্বান জানান সংসদ সদস্য। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের কষ্ট দূর করতে এই মুহূর্তে করণীয় কী’ শিরোনামে দীর্ঘ পোস্ট দেন তিনি। আজিজুল ইসলাম কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ফেসবুক পোস্টে সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম লিখেছেন, যেভাবে চলছে, তাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লেগে যাওয়ার কথা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার কোনও সলিউশন হতে পারে না। আমি মনে করি, যেসব শিক্ষার্থীর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাদের গ্রেফতার করাটা অযৌক্তিক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরপাকড় করাটা মোটেও সুখকর হবে না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি, শিক্ষামন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অভিভাবক, আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক ও জাতীয় অধ্যাপকদের নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিস্থিতি ফেরাতে একটা সর্বজনীন ডায়ালগের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেখানোই হবে সময়ের সেরা সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তিনি আরও লিখেছেন, একটা পক্ষ তো চাচ্ছেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাঁধে বন্দুক রেখে সরকার পতন করতে। দুষ্কৃতকারীদের সেই সুযোগও নষ্ট হবে এ রকম কিছু করলে। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় যে দুজন লোকের ওপর শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ, সেই ওবায়দুল কাদের সাহেব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এখনও শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে দেখলাম না। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এতগুলো তাজা প্রাণ চলে গেছে। দায়িত্বশীলরা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইলে দোষের কিছু দেখি না। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বও যেমন নিতে হয়, তেমনিভাবে দায়ও নিতে হয়। একটা দেশ এরকম অচল অবস্থায় থাকতে পারে না। দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য রাষ্ট্রকেই এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিষয়টি যেহেতু কোনও রাজনৈতিক দলের নয়, সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের এখানে যথাযথ ভূমিকা রাখা উচিত। আর শিক্ষার্থীদের দিক যদি আমাদের ভিসিরা দেখতে ব্যর্থ হন, আমি মনে করি না তাদের ওই পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার আছে।
তিনি আরও লিখেছেন, দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তি চায়। আর কোনও হানাহানি দেখতে চায় না। গত দুই-তিন সপ্তাহে দেশ যতটুকু পিছিয়ে গেছে, আর পিছিয়ে যাবার সুযোগ নেই। সবার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হোক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক।
পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, পোস্টটি আমার দেয়ায়। কারণ শিক্ষার্থীদের মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রীর কথায় যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই দায়ভার তাদের। দেশের এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাওয়া উচিত।