বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরসহ সব ধরনের সহযোগী সংগঠনকে সরকার নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৯৪১ সালে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত দলটি চতুর্থবারের মতো নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে দলটিকে দুই দফায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গণহত্যায় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার জন্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং সে সময় দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থান আর পালটা অভ্যুত্থানের পালাবদলে ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তত্কালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের আপিল খারিজ করে দেয়। নিবন্ধন বাতিলের ফলে বাংলাদেশে প্রতীক নিয়ে এককভাবে (দলীয়ভাবে) নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারায় দলটি। মানবতাবিরোধী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল থেকেও এক আদেশে দলটিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করে নিষিদ্ধ করার আদেশ দিলেও সরকার দীর্ঘদিন বিষয়টি নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি।
অনেকটা আকস্মিকভাবে গত ২৯ জুলাই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামী ও তার সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে শরিক দলগুলোর বক্তব্য, তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ, দলটির অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময় দেওয়া আদালতের রায় ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধে ১৪ দল সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ঐ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার।