আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন হাজিরা। শনিবার (১৫ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করবেন তারা। হাজিরা এখানে এক আজানে জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর মুজদালিফায় গিয়ে একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন তারা।
রোববার (১৬ জুন) আবার মিনায় ফিরে পশু কোরবানি করবেন।
আলাফাত ময়দানে হাজির হয়ে হাজিরা দুহাত তুলে মহান রবের কাছে জানান সারা জীবনের পাপ মোচনের নিবেদন।
আরাফাতের ময়দানের পাশে অবস্থিত মসজিদে নামিরায় হজের খুতবা দিয়েছেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব ড. শেখ মাহের বিন হামাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আল-মুয়াইকিলি। তিনি ফিলস্তিনিদের মুক্তিসহ গোটা মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করেন। এছাড়া হজের খুতবায় ড. শেখ মাহের বিন হামাদ বিন মুহাম্মাদ বিন আল-মুয়াইকিলি মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করাসহ কোরআন ও হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেছেন।
আরাফাতের ময়দান হারাম এলাকার সীমানার বাইরে অবস্থিত। মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আরাফাতের ময়দান। এ ময়দানের প্রান্তে দাঁড়িয়েই রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফাহ ছাড়া আর কোনো দিবস নেই; যেদিন আল্লাহ তার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাহকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন এবং বান্দাদের সন্নিকটে চলে আসেন।
শয়তান এদিনে সব মানুষের আল্লাহর প্রতি জিকির, দোয়া ও ইসতেগফার করতে দেখে সবচেয়ে বেশি হীন ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়। ক্রোধান্বিত ও বেদনাবিধুর হয়ে যায়।
৯ জিলহজ মিনায় ফজরের সালাত আদায়ের পর আরাফাতের উদ্দেশে দলবদ্ধ হয়ে রওনা হতে শুরু করেন হাজিরা। সাধারণত সবাই বাসে যান, তবে হেঁটেও যান কেউ কেউ।
আরাফাহর সীমানার ভেতর প্রবেশ করে নামিরা মসজিদে ইমামের খুতবা শোনেন হাজিরা এবং জোহর ও আসরের নামাজ একসাথে ইমামের পেছনে আদায় করেন তারা। তবে মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অধিকাংশ হাজি আরাফাতের ময়দানে তাঁবুতে একাকি জোহর-আসর একসাথে পড়ে থাকেন।
এখানে নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো, জোহরের সময়ের প্রথম দিকে এক আজান ও দুই ইকামাতে যথাক্রমে জোহর ও আসর কসর করে পরপর আদায় করা। এ দুই সালাতের আগে, মধ্যে ও পরে কোনো সুন্নাত পড়ার নিয়ম নেই। আসরের সময়ের আগেই এ দুই ওয়াক্তের নামাজ পড়ে ফেলতে হয়।
আরাফাতের দিবস রোজা রাখলে আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, বরং যারা হজ করতে আসেননি তাদের জন্য। আপনার পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের বাড়িতে এ দিনে রোজা রাখতে বলুন। হাজিদের জন্য আরাফাত দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ।
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেলে অত্যন্ত বিনয়ী ও তাকওয়ার সাথে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন হাজিরা। এ দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, এ জন্যই আরাফাতে আসেন তারা।
কেবলার দিকে মুখ করে দুই হাত উচুঁ করে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ক্ষমা চান, দয়া কামনা করেন ও মনের আকাঙ্ক্ষা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রকাশ করেন।
৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার পর থেকে আরাফাতে অবস্থানের প্রকৃত সময় শুরু হয়। আরাফাতের ময়দানে মধ্যপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। আর তার সময় শেষ হয় আরাফাহর দিবাগত রাতের শেষে দশ তারিখের সূর্য উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্তের পর লাল-হলুদ আভা বিলীন হওয়া পর্যন্ত ধীরস্থির অবস্থান করতে হয় এবং মাগরিবের আজানের পর সালাত আদায় না করেই মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়। হাজিরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন মুজদালিফায় গিয়ে।