Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ■ ইসরায়েলি হামলায় গাজা আরো ১১৫ ফিলিস্তিনির মৃত্যু ■ দ্বিতীয় দফা লেবানন থেকে ফিরছেন ৬৫ বাংলাদেশি ■ হঠাৎ খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ■ প্রধান উপদেষ্টার মেডিকেল টিম নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ ■ যে কারণে বাংলাদেশকে ৩৩ লাখ ডলার দেবে জাপান ■ বুধবার রাজধানীতে যেখানে যাবেন না
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য
Published : Friday, 14 June, 2024 at 11:35 PM

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

প্রায় প্রতিবছর আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বুক পেতে রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। মাতৃস্নেহে আগলে রাখা সুন্দরবনের কারণে উপকূলীয় জনপদে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম হয়। কিন্তু এবার ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পড়েছে হাজার হাজার বন্যপ্রাণী।

গত ২৮ মে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের ভয়াবহ আঘাতে ৫ থেকে ৭ ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। টানা ৪৮ ঘণ্টা সমুদ্রের লবনাক্ত পানিতে তলিয়ে ছিল পুরো বনাঞ্চল। ফলে প্রথমবার এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে এই বনাঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

এতো দীর্ঘ সময় জোয়ারের পানি আটকে থাকায় বন্য প্রাণীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মারা গেছে ৪০টি হরিণ এবং ১টি বন্য শুকর। সাগরের নোনা পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে বন্য প্রাণীদের জন্য তৈরি করা মিঠা পানির পুকুর-সহ শতাধিক জলাশয়। জীবিত উদ্ধারের পর ১৭টি হরিণকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তারা জানান, এই এলাকায় জলোচ্ছ্বাসে ১৪টি পুকুরের পাড় ভেঙে গেছে। ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ গোলপাতার বাগান প্লাবিত হয়ে গেছে। ১৮টি জেটি, ২৬৩০ ফুট রাস্তা ও বাঁধ, ৯টি সড়ক ও বনরক্ষীদের ৩টি ব্যারাক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুটি ওয়্যারলেস টাওয়ার। একটি পল্টুন ভেসে গেছে। এতে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের একমাত্র করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের নানা অবকাঠামো। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পর্যটক চলাচলে তৈরি করা এখানকার কাঠের সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা।

রেমালের আঘাতে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজমসহ ফরেস্ট স্টেশনগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণীদের খাওয়ার মিষ্টি পানির আধারগুলো নোনা পানিতে নষ্ট হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও মায়াবী হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বনের গাছে শত শত পাখির বাসা ছিল, ডিম-বাচ্চা ছিল। এখন গাছে কোনও পাখি নেই। হরিণ মারা গেছে, গাছ নষ্ট হয়েছে, টাকা দিয়ে এসব মাপা যায় না। সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।

এছাড়া বঙ্গোপসাগরের পাশে মান্দারবাড়িয়া এবং হলদিবুনিয়া নামে দুটি অভয়ারণ্য রয়েছে, যেগুলি পশ্চিম অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এসব অভয়ারণ্যের বন্য প্রাণীদের জন্য তৈরি করা মিঠা পানির পুকুর ভেসে গেছে, ভেঙ্গে গেছে জেটি।

দক্ষিণ অভয়ারণ্যের আওতায় হীরন পয়েন্ট বা নীল কমল। এখানে বাঘের কিল্লা নামে ১২ টি স্থান রয়েছে। যেখানে ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে বাঁচতে প্রচুর হরিণ আশ্রয় নিয়েছিল। বাঘের কিল্লা হচ্ছে উঁচু স্থান যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্য বন্য প্রাণীরা আশ্রয় নেয়।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


মোহসিন হোসেন বলেন, এবারই প্রথম প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পুরো বন তলিয়ে ছিল। এর আগে সিডর বা আইলাতেও এরকম দেখিনি। দীর্ঘ সময় পানি আটকে থাকায় বন্য প্রাণীর বেশি বেগ পেতে হয়েছে। এমন সমস্যা এবারই প্রথম দেখলাম।

এছাড়া মিঠা পানির পুকুরগুলো লবণাক্ত হয়ে যাওয়ায় বন্য প্রাণীর উপর স্থায়ী প্রভাব পড়বে। কারণ পুকুরের মিষ্টি পানি বন্যপ্রাণীর তৃষ্ণা মেটাত। বাঘ, হরিণ থেকে শুরু করে মৌমাছিও মিষ্টি পানি পছন্দ করে। সুন্দরবনে এখন মধুর সিজন চলছে। মিষ্টি পানি ছাড়া মধু আহরণ করতে পারে না মৌমাছি।

তিনি বলেন, ফলে প্রত্যেকটি বন্য প্রাণীই আগামী কিছুদিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামনে বর্ষার মৌসুম আসছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে পুকুরগুলি ডিওয়াটারিং করে সেখানে বর্ষার মিষ্টি পানি ধরতে হবে। মিষ্টি পানি না ধরা পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ফলে যত দ্রুত বর্ষা মৌসুম আসবে বন্য প্রাণীর জন্য তত ভালো হবে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


এদিকে সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকায় গরান বন বেশি হওয়ার কারণে বন্য প্রাণীর মৃত্যু সংখ্যা কম। কারণ গরান গাছগুলো ঝোপের মত গাছ। ফলে প্রবল তোড়ে গরান বনে পানি ঢুকতে পারে না। তাই সেখানে বন্য প্রাণীর মৃতের সংখ্যা কম। তবে ওখানে লবনাক্ততা বেশি।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের এলাকায় কেওড়া বন বেশি। এ গাছগুলো অনেক বড় বড় হয়। ফলে নিচে ফাঁকা থাকায় প্রবল গতিতে পানি প্রবেশ করে বন্য প্রাণীর মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, গাছের উচ্চতার তারতম্যের কারণে এই বিভাগে হরিণের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে। কটকা, কচিখালী, দুবলা ও হিরণ পয়েন্ট সৈকতে মৃত হরিণ বেশি দেখা গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


করমজল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনে জোয়ারে যে পানি হয় তার চেয়ে এবার পাঁচ-ছয় ফুট বেশি পানি হয়েছে। জোয়ারের পানি ছিল দীর্ঘ সময়। এটা প্রাণীদের জন্য খুবই নাজুক অবস্থা তৈরি করে। কেন্দ্রের কোনও প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে, দুইটি বন্য হরিণ ও একটি শুকরের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সুন্দরবনের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আগামী ২০ বছরেও পূরণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, স্টেশনের পাশের আধারগুলোর পানি সেচে শুকিয়ে ফেলে সামনের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার কাজ চলছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে উন্নয়ন সংস্থা ‘লিডার্স’ এবং নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ আয়োজিত ‘উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল-পরবর্তী পরিস্থিতি ও জরুরি করণীয়’ শীর্ষক সভায় বক্তারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের ভেতরের প্রায় ৮০টি মিঠা পানির পুকুর লবণ পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্য প্রাণী, বনজীবী এবং বনে অবস্থান করা বনকর্মীদের মিঠা পানির একমাত্র উৎস ছিল এসব পুকুর। এতে সুন্দরবনে স্বাভাবিক ও পানযোগ্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে।  

সভায় মৎস্য সম্পদ বিশেষজ্ঞ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, লবণাক্ত পানির আগ্রাসন ঠেকাতে না পারলে পুরো জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের ফলে যেসব মিঠা পানির পুকুরে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে, সেগুলো দ্রুত অপসারণ করতে হবে। না হলে মিঠা পানির পুকুরে থাকা মাছ মারা যাবে। পরে দীর্ঘসময় জুড়ে এর প্রভাব পুরো দেশের মৎস্য খাতে পড়বে। এসব বিষয়কে জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে উপকূলের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এতে ক্ষতির বিপরীতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে তছনছ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য


দেশসংবাদ/এএল/এমএইচ


আপনার মতামত দিন
আসছে নতুন ঘূর্ণিঝড় ডানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Tuesday, 22 October, 2024
সারাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা
নিজস্ব প্রতিবেদক
Monday, 21 October, 2024
লঘুচাপের পূর্বাভাস , নামতে পারে বৃষ্টি
দেশসংবাদ ডেস্ক
Friday, 18 October, 2024
ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’র আভাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
Friday, 18 October, 2024
সব বিভাগেই বৃষ্টির আভাস
দেশসংবাদ ডেস্ক
Tuesday, 15 October, 2024
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক
এফ. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: [email protected]
up