Published : Sunday, 9 June, 2024 at 11:29 PM, Update: 09.06.2024 11:33:24 PM
নেত্রকোনায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ দুই দিনব্যাপী চালানো অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া গ্রামে ড. আব্দুল মান্নানের বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সন্দেহে শুক্রবার (৭ জুন) রাত থেকে ঘিরে রাখে পুলিশ। শনিবার দুপুরে প্রাথমিক তল্লাশি চালিয়ে একটি ভারতীয় পিস্তল, ১৭ রাউন্ড গুলি, একটি ডামি একে-৪৭ সহ জিহাদি বই উদ্ধার করে।
তবে আস্তানা থেকে কাউকেই আটক করতে পারেনি পুলিশ। তবে এসময় ৬টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) নিস্ক্রিয় করে এন্টি-টেররিজম টিম।
জানা যায়, গত ছয় জুন অস্ত্র মামলার আসামি মো. হামিম হোসেন ফাহিম ওরফে আরিফ (৩২) নামের এক যুবক নরসিংদীতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার আরিফ পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার মাঝিবাড়ি এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে। তিনি নেত্রকোনার দেওপুর ভাসাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
এমন তথ্যের ভিত্তিতে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম খোঁজ নিয়ে প্রকৌশলী আব্দুল মান্নানের বাড়ি তল্লাশি করেন। তল্লাশিকালে বিদেশি একটি পিস্তল ও ১৭ রাউন্ড গুলিসহ বেশ কিছু আলামত পান।
এরপর পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন শনিবার দুপুরে। ঘিরে রাখা প্রায় সাড়ে তিন একর জায়গা নিয়ে বাড়িটি সন্দেহজনক হওয়ায় এন্টি-টেররিজম ইউনিটের ময়মনসিংহের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুল্লাহ চৌধুরী একটি টিম নিয়ে পরিদর্শন করে জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পান।
শনিবার দুপুর থেকে চলা অভিযানের পরে রোববার সকালে ঢাকা থেকে আসা এন্টি-টেররিজম টিমের পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সোয়াট, বোম ডিসপোজাল টিমসহ তিনটি টিম অভিযানে নামে। বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভেতরে ৫টি ও বাইরে ১টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ক্রিয় করা হয়। সেখান থেকে ৮০ ধরনের জঙ্গি প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়।
জব্দ তালিকায় শক্তিশালী প্রশিক্ষণের উপকরণসহ দামি ল্যাপটপ ও বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন রয়েছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি আবুল কালাম জানান, তিনি নরসিংদী থেকে তথ্য পেয়েই গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পিস্তলসহ গুলি পান। এর আগেই আস্তানায় থাকা অন্যরা পালিয়ে গেছেন।
স্থানীয় হাবিবুর রহমানসহ অন্যরা জানান, এই বাড়িটিতে একজন হুজুর থাকতেন। কিন্তু এই বাড়িতে তেমন আসা-যাওয়া করেনি এলাকার মানুষ।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, এমন একটি ভয়ংকর জঙ্গি আস্তানা নেত্রকোনায় এটিই প্রথম। যেখানে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
অভিযান শেষে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিং করে সব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভেতরে পরিদর্শন করে উন্নতমানের জিমনেশিয়াম পাওয়া গেছে। যা সচরাচর কোনো জিমেও ব্যবহার হয় না। এছাড়াও অনেকগুলো বাথরুম রয়েছে ভেতরে। সাধারণভাবে ধারণা হয়, ১৫ থেকে ২০ জনের মতো একসঙ্গে থাকতেন এই বাড়িতে।
তাছাড়াও ঘরে রান্না করা খাবার দেখে ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে খাবার না খেয়েই তারা পালিয়ে গেছে। তাদের কাছে উন্নতমানের দুটি দূরবীন ছিল। এছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা বাড়িটি নিয়ন্ত্রণ ছিল। যে কারণে কেউ আসতেই দূর থেকে তারা বুঝে সরে যেতে পারতো। এই জন্যেই ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি।
বাড়ির মালিকের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গতকাল ১১টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা হয়েছিলো। এরপর থেকে নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে অচিরেই যোগাযোগ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে অন্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, বাড়ির মালিক নিজেই এই বাড়িতে একটি মহিলা ক্যাডেট কলেজ করতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি কারিগরি কলেজ নাম করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চালান। সেই সঙ্গে তিনি বালি এলাকায় একজন জামায়াতের আমিরের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে এই বাড়িটি বিএনপির এক নেতার কাছ থেকে কিনে নেন। যা গত তিন বছর ধরে ভাড়া রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ওই বাড়ির বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। কেউ মুখও খুলেননি।