অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে তিন উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল। অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এরই মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। পানিবন্দি বিভিন্ন স্থানের মানুষেরা এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
সিলেট জেলার পাঁচটি পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাউবোর সন্ধ্যা ৬টার তথ্য অনুযায়ী, জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ দশমিক শূন্য ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার, জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার, জাফলংয়ে ডাউকি নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার এবং গোয়াইনঘাটে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ১ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার জাফলং, গোয়াইনঘাট ও সারিঘাট তিনটি পয়েন্টেই নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। নদীর পানিতে হাওরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর বুধবার বিকাল থেকে ১৩টি ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ও ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়া গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কও প্লাবিত হয়েছে। রুস্তমপুর, লেংগুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং, মধ্য জাফলং ইউনিয়নে প্লাবনের পরিমাণ অনেক বেশি।
ইউএনও জানান, এরই মধ্যে ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও প্লাবনপ্রবণ এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে জনগণকে দ্রুত অবস্থান নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ উঠতেও শুরু করেছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া জানিয়েছেন, উপজেলায় নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেলা, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ ও বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কানাইঘাট উপজেলার চারটি ইউনিয়নের হাওর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।
তিনি জানান, কানাইঘাট বাজার ও কানাইঘাট টু বাগান সংযোগ সড়কের মন্দির, আমবাড়ি, আমরি খাল পয়েন্ট প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে এক ও দুই নম্বর ইউপির মুলাগুল বাজার, কান্দলা, মেচা, উত্তর ও দক্ষিণ লক্ষিপ্রাসাদ, কুওরগড়ীতে প্লাবনের পরিমাণ বেশি হয়েছে।
উপজেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসাইন জানান, বুধবার সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪৬ দশমিক শূন্য ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত।
আগামী তিন দিন সিলেটে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।