Published : Wednesday, 22 May, 2024 at 1:51 PM, Update: 22.05.2024 1:56:45 PM
বিপিএল হাউজিংয়ের ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র, বিভিন্ন দলিল, মানি রিসিপ্টসহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরির মামলায় কোম্পানিটির সাবেক কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার অন্তর্বর্তী জামিন বাতিল করেছেন আদালত।
সোমবার ( ২০ মে) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রেজাউল করিম এ আদেশ দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এস এম ফরমানুল ইসলাম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বিপিএল হাউজিং প্রকল্প পরিচালক থাকাকালে শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা তারই মালিকানাধীন অপর হাউজিং কোম্পানি জিয়ো প্রপার্টিজ থেকে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। বিপিএল হাউজিং নামে কেনা ওই ফ্ল্যাটের মূল্য বাবদ এক কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ৪৮টি চেকের মাধ্যমে ৯ কিস্তিতে পরিশোধ করেন।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা বিপিএল হাউজিং লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অর্থ-আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়, কোম্পানির টাকা নিজ ব্যবসায় লগ্নিসহ গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানির দলিলপত্র, প্রয়োজনীয় ফাইল, মোবাইল সেট ও হিসাবপত্র বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু লস্কর ধীরা দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে শুরু করেন। শাহবুদ্দিন লস্কর ধীরা কোম্পানিরঅর্থ ফেরত না দিয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে সেই মামলা আদালত খারিজ করে দেন।
লস্কর ধীরা বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের তদন্ত করার জন্য কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ধীরার মেয়াদকালে অডিট কার্য সম্পন্ন করা হয়। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও এক্রিডিয়েটেড অডিট ফার্মের অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে চার কোটি চব্বিশ লাখ ১৩ হাজার ১৫১ টাকা অর্থ আত্মসাতের তথ্য উদঘাটিত হয়। এছাড়া নানা প্রতারণা ও হিসেবের গরমিল দেখিয়ে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তার অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা কোম্পানির নির্দেশ অমান্য করে ফাইল পত্র বুঝিয়ে না দিয়ে কোম্পানির ৬৮টি মূল দলিল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে অফিস কাজে ব্যবহৃত (ক্রয়কৃত) ফ্ল্যাটের (জিয়ো শৈলী গার্ডেন ২য় তলা ১৪/৬ লেক সার্কাস কলাবাগান ঢাকা-১২০৫ ) ক্রয় চুক্তির মূল কপি, ফ্ল্যাটের টাকা পরিশোধের মানি রশিদের মূল কপিসহ প্রয়োজনীয় ফাইলপত্র অফিস থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া ৪৮টি চেকের মাধ্যমে এক কোটি ৩২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা রিসিভ করে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে না প্রতারণা করে চলছে। এই বিষয়ে কলাবাগান থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এই মামলায় গত সপ্তাহে অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছিলেন তিনি। যার মেয়াদ ছিল সোমবার পর্যন্ত। এরপর আদালতে হাজির হলে বিচারক তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার আরেক আসামি মো. রেজাউল কবিরকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেয়া হয়।
শাহাবুদ্দিন লস্করসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিপিএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বায়োফার্মার (প্ল্যান্ট) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল আমিন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে মামলার আবেদন করলে মহানগর হাকিম আতাউল্লাহ ঢাকার কলাবাগান থানাকে অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দেন। অপর আসামি জিয়ো প্রপার্টিয়ের কর্মচারী রেজাউল কবিরও চুরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা খুলনার সাংবাদিক বেলাল হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি। এছাড়া ডিএমপির বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১৪টির অধিক জিডি করা হয়েছে।