বাংলাদেশ-সহ এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের তীব্র ও দীর্ঘতম তাপপ্রবাহ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় তাপমাত্রা বেড়ে ভেঙে গেছে আগের সব রেকর্ড। গত ৩০ এপ্রিল যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা তিন দশকে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। দেড় মাসে অঞ্চলভেদে গড় তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। ১৯৮৯ সালের পর এত দীর্ঘসময় ধরে একটানা তাপপ্রবাহ কখনও দেখেনি বাংলাদেশ।
এরই মধ্যে বার বার হিট অ্যালার্ট জারি হয়েছে। বেশি কষ্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের। ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে হিট স্ট্রোকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে।
পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যেকোনো দেশের আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার; কিন্তু পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এ বছরের তথ্য মোতাবেক দেশে বনভূমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে। যেভাবে উজাড় হচ্ছে সেভাবে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মোতাবেক, এক সময় এ দেশে ১৩শ নদী ছিল, এখন আছে ৪০৫টি, সেগুলোও দখলের পাঁয়তারা চলছে। খাল-বিল-জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তৈরী করা হচ্ছে। এ ছাড়া কলকারখানার নির্গত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত গ্যাস আমাদের বাতাসকে কলুষিত করছে। বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ কমে মাত্র ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জলাভূমি নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯ শতাংশে। ঢাকায় মাত্র ২৯ দশমিক ৮৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় গাছপালা ও খালি জায়গা রয়েছে যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৫২ দশমিক ৪৮ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে জলাভূমি এলাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৮ বর্গকিলোমিটার। যা ১৯৯৫ সালে ছিল ৩০ দশমিক ২৪ বর্গকিলোমিটার। একটি আদর্শ শহরে ১৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জলাভূমি থাকার নিয়ম রয়েছে।
এরকম শুধু বাংলাদেশেই নয়, চলমান এ তাপপ্রবাহ এবার এশিয়ার অনেক অঞ্চলেই ঘটেছে। এ বছরের এপ্রিলে রেকর্ড তাপমাত্রা এবং তাপপ্রবাহ দেখা গেছে। এ আবহাওয়া বিরূপ প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর। অদূর ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে বলেও ইঙ্গিত জলবায়ু বিজ্ঞানীদের।
তাদের দাবি, প্রতি ৩০ বছরে একবার এ ধরনের তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, এ তাপপ্রবাহ তৈরির সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই প্রায় ৪৫ গুণ বেড়ে গিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে শুধু তাপপ্রবাহের কারণেই ১ লাখ ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে।