নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করা শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে৷
রোববার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১ টার দিকে ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন জানান৷
এর আগে মার্চ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাটির কয়েকশ’ শ্রমিক৷
পরে বেলা ১২টার দিকে কারখানাটি দু’দিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ নোটিশ সাঁটিয়ে দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা৷ পরে পুলিশ জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে লাঠিচার্জ করলে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে শ্রমিকরা৷
এ সময় পুলিশকে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে দেখা যায়৷ বেলা ১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলছিল৷
বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ তখন শ্রমিকরা ঈদের বোনাস পেলেও মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল৷
কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও তা দেননি৷ এতে ঈদের মধ্যে অর্থ সংকটে দিন কাটিয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা৷
কারখানাটির শ্রমিক কামাল মিয়া বলেন, আমাদের দিন খুব কষ্টে যাচ্ছে৷ ঈদে দেশে (গ্রামের বাড়ি) যেতে পারিনি৷ বউ-বাচ্চাসহ শহরে ভাড়া বাসায়ই থাকছি৷ বাসা ভাড়াও দিতে পারি নাই৷ এখন তো দুই মাস ভাড়া বাইজা গ্যাছে৷ মার্চের বেতন পাই নাই, এপ্রিলও শ্যাষের দিকে৷ এখন কোন মাস রাইখা কোন মাসের বেতন দিবো বুঝতেছি না৷
গত ৮ মাস যাবৎ বেতন নিয়ে কারখানার মালিকপক্ষ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করে কারখানাটির আরেক শ্রমিক নুরু মিয়া বলেন, ঈদের দিনও মোবাইল হাতে নিয়া বইসা ছিলাম বেতন ঢুকবো এই আশায়৷ প্রতিমাসেই বেতনের লাইগা রাস্তায় নামতে হইতেছে৷ সামনে কোরবানির ঈদ, ওই ঈদেও আমাগো লগে এমন হইবো৷
নারগিস বেগম নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আমাগো আর ঈদ আনন্দ নাই৷ রোজার মইধ্যে ডাবল ডিউটি কইরাও বিল পাই নাই৷ এমনকি রোজার ডিউটির সময় ইফতারের খরচটাও দেয় নাই৷ নিজের কষ্টের টাকা পাইতে এখন রইদের মইধ্যে রাস্তায় নামছি৷ এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে!
তবে, কারখানাটির মালিক প্রতিষ্ঠান ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানির সাথে ‘দেশ সংবাদ’বারবার মুটোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলেও তিনি ফোন ধরেনি।
দিকে, শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে বেলা ১২টার দিকে মালিকপক্ষ কারখানার প্রধান গেটে সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিন কারখানা বন্ধ ঘোষণার নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়৷
ওই নোটিশে বলা হয়, গত ২০ ও ২১ এপ্রিল কারখানার শ্রমিকরা ‘বেআইনিভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করে কর্মবিরতি পালন করছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল৷