শিরোনাম: |
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভরাডুবি না হলে ‘সবকিছু মেনে নিতেন’ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির একাংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে আয়োজিত বর্ধিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন, কেন আমি নির্বাচনে অংশ নিলাম না। জাতীয় পার্টির অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতা, যাদের ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো- এমন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাদের বাদ দিয়ে তো আমি নির্বাচন করতে পারি না। আমার ছেলের আসনও যদি কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে ছেলেকে ফেলে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না।
রওশান এরশাদ বলেন, তারপরও আমি সব কিছু মেনে নিতে পারতাম, যদি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভরাডুবি না হতো। জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের শেষ সীমানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এটা আমি কীভাবে মেনে নেবো?
বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
২৮ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি থেকে জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। নিজেকে চেয়ারম্যানও ঘোষণা করেন তিনি। রওশন বলছেন, কাদের ও চুন্নুকে পদ থেকে সরানো হয়েছে। আগামী ৯ মার্চ দলের সম্মেলন ঘোষণা করেছেন রওশন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি। ভোটে জেতে ১১টি আসনে। নির্বাচনে এই ভরাডুবির জন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান এবং জি এম কাদেরকে দায়ী করে বিক্ষোভও করেছেন।
১১ আসন নিয়ে এবার সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিরোধী দলীয় নেতা হয়েছেন জি এম কাদের এবং উপনেতা হয়েছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
ওই নির্বাচনে অংশ নেননি রওশন এরশদা, তার ছেলে সাদ এরশাদসহ দলের অনেকেই।
শনিবার নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেছেন, দলের ভাঙনের জন্য সরকার দায়ী।
এদিকে, জাপাকে উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ নেয়ায় তার পক্ষের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে রওশন বলেন, পার্টির অগণিত নেতাকর্মীর একান্ত দাবির মুখে আমি জাতীয় পার্টির চেয়াম্যানের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়েছি। আজ আপনারা আমার দায়িত্বগ্রহণকে অনুমোদন দিয়েছেন। আপনারাই জাতীয় পার্টির সব ক্ষমতার উৎস। আপনারা যেভাবে চাইবেন, পার্টি সেভাবেই পরিচালিত হবে।
জাতীয় পার্টিতে পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক চর্চা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য আগামী ৯ মার্চ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হতে পারে। কোনো ষড়যন্ত্র, বিভ্রান্তিতে আপনারা কান দেবেন না। ৯ মার্চের সম্মেলন সফল করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের জন্য আমরা রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বরাদ্দ পেয়েছি। আমরা পুলিশ প্রশাসনের অনুমতিও পেয়েছি। আপনারা ৯ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের নিয়ে উপস্থিত হবেন। ওইদিন আপনারাই জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।
জি এম কাদেরপন্থিরা জাপা থেকে এরশাদের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন অভিযোগ তুলে রওশন এরশাদ বলেন, পল্লীবন্ধুর নীতি-আদর্শ, তার চেতনা-প্রেরণা, তার ভাবমূর্তি হচ্ছে জাতীয় পার্টির অস্তিত্ব। সেই অস্তিত্ব যারা মুছে দিতে চান, তারা জাতীয় পার্টির পরিচয় দেয়ার অধিকার রাখেন না। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের মলাট থেকে পল্লিবন্ধুর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পর এবারের নির্বাচনে পার্টির প্রার্থীদের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি রাখতে দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার নির্বাচনী পোস্টারে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখেছেন। অথচ জাতীর পার্টির চেয়ারম্যানের পোস্টারে পল্লীবন্ধুর ছবি জায়গা পায়নি। এটা জাতীয় পার্টির অগণিত নেতাকর্মীর মনে আঘাত দিয়েছে। তারা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
দেশের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে বলেও মনে করেন রওশন এরশাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে। নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছি। সরকার যদি তা মোকাবিলা করতে না পারে, তাহলে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে।
সাবেক এ বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সামনে রমজান। দ্রব্যমূল্য এখনই সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। অসাধু ব্যবসায়ীরা রমজান সামনে রেখে ওঁত পেতে বসে আছে। এখন সরকারের প্রধান কাজ হবে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করতে হবে।
দেশ সংবাদ/এসএইচ
আপনার মতামত দিন
|