Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ বুধবার রাজধানীতে যেখানে যাবেন না ■ কবে রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়বেন তা জানালেন হাসনাত-সারজিস ■ বাংলাদেশ থেকে ৬৫০ কিমি দূরে নিম্নচাপ, ঝড়ের শষ্কা ■ ছাত্র হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি ■ পুলিশ গাড়িতে ওপর আন্দোলনকারীদের হামলা ■ নির্মাণাধীন ভবন ধসে ৩ জনের মৃত্যু ■ বঙ্গভবনের সামনে দুই শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
পাকিস্তান ও ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্কই বা কেমন?
Published : Thursday, 18 January, 2024 at 8:06 PM

পাকিস্তান - ইরান

পাকিস্তান - ইরান

পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জাইশ আল-আদলকে লক্ষ্য করে ইরান সম্প্রতি হামলা চালানোর পর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত সীমানা ছাপিয়ে অন্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পাকিস্তানের সরকার নিশ্চিত করে বলেছে যে, ওই হামলায় দুটি শিশু নিহত হয়েছে এবং তিন জন আহত হয়েছে। তারা বলেছে, সাম্প্রতিক এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’। একই সাথে ‘কোনও ধরনের উস্কানি ছাড়াই’ আকাশসীমা লঙ্ঘনের এই ঘটনার বদলা নেওয়া হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ইরান দাবি করেছে, জাইশ আল-আদল নামে একটি সুন্নি জঙ্গি গোষ্ঠী পাকিস্তান-ইরান সীমান্তে সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল তাদের মদত দিয়ে যাচ্ছে। অতীতে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করেছে এই গোষ্ঠীটি। জাইশ আল-আদল বা ‘ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে যোদ্ধা’ হচ্ছে একটি জঙ্গি গোষ্ঠী যারা ইরানের সরকারের বিরোধিতা করে। এই গোষ্ঠীটি নিজেদেরকে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে ‘সুন্নি অধিকার রক্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।

২০০৯ সালে ইরান আব্দলমালেক রিগি নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তিনি এই জঙ্গি গোষ্ঠীটির প্রধান। এর আগে এই গোষ্ঠীটি জানদাল্লাহ বা আল্লাহর যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিল। আব্দলমালেক রিগির বিরুদ্ধে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর উপর বোমা হামলা চালানো এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগ আনা হয়। ২০১০ সালে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। সে সময় ইরানে নিয়োজিত থাকা পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ আব্বাসি বলেছিলেন, রিগির গ্রেফতারে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা বলছে, ইরানে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ এবং হামলার পেছনে জাইশ আল-আদলের হাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ২০০৫ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের উপর হামলা। জাইশ আল-আদল যেসব হামলার দায় স্বীকার করেছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে চালানো হয়েছে। সামরিক মহড়ার সময় দেখা যাওয়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র যা সম্প্রতি পাকিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়ায় আঘাত হেনেছে।

ইরানের সামরিক বাহিনী বা রিভলিউশনারি গার্ড কোর ইরাক এবং সিরিয়ায় বিভিন্ন লক্ষ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালানোর পরের দিনই এই বিমান হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ মুশাহিদ হুসাইন সাইদ বলেন, ‘এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বিস্ময়কর ছিল।’

আমার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আপাতত দেখে মনে হচ্ছে যে, এটা ইরানের সামরিক বাহিনী রিভলিউশনারি গার্ড কোরের গোপন অভিযান এবং এটি অবশ্যই আরো বিস্তৃতভাবে দেখার সুযোগ রয়েছে, বলেন সাবেক এই মন্ত্রী।

তিনি আরও দাবি করেন, এই হামলা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক প্রটোকলের লঙ্ঘন। একই সাথে এটি এমন এক সময়ে ইসলামী ঐক্যের চেতনাকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা যখন ‘গাজায় একটি গণহত্যা চালানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রতি হতাশা প্রকাশ করার পরিবর্তে তেহরান গত চব্বিশ ঘণ্টায় তিনটি মুসলিম দেশের উপর হামলা চালিয়েছে। এ ধরনের ভণ্ডামি এবং দ্বিচারিতার তীব্র নিন্দা করা উচিত, বলেন তিনি। ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যকার সম্পর্কে সুসময় ও দুঃসময়-দুটোই ছিল।

ইরানই প্রথম দেশ হিসেবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং বিদেশে পাকিস্তানের প্রথম দূতাবাসও ইরানে স্থাপন করা হয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় দুই দেশ পরস্পরকে সহায়তা করেছে এবং ভূ-রাজনীতিতে তারা ব্যাপকভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল।

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তেহরান ইসলামাবাদকে সমর্থন দিয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র লড়াই ১৯৬৫ সালের অগাস্টে শুরু হয়ে ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছিল। যাই হোক, ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লব এবং পাকিস্তানে সৌদি-অনুপ্রাণিত ওয়াহাবি ধারার ইসলাম চর্চা বাড়তে থাকলে ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়তে থাকে।

১৯৯০ এর দশকে পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িকতা এবং শিয়া ছায়াযুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। আর অন্য দিকে এই সময়ে কাবুল ভিত্তিক তালেবান সরকারকে ইসলামাবাদের সমর্থন দেয়া নিয়ে অস্বস্তি ছিল তেহরানের।

ভারতের সাথে ইরানের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ওয়াশিংটনের সাথে পাকিস্তানের কৌশলগত মিত্রতা বাড়ানোর বিষয়টি দুই দেশকে পরস্পর থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান ও ইরান বছরের পর বছর ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে আসছে।

২০১৮ সালে ইরান যখন চাবাহার নামে দেশটির সমুদ্র বন্দরের একাংশের নিয়ন্ত্রণ নয়াদিল্লির হাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে ভারতের সাথে একটি চুক্তি সই করে, তখন ইসলামাবাদ এটি নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছিল।

পাকিস্তানে এই বিষয়টিকে গোওয়াদার বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব কমিয়ে আনতে ভারত ও ইরানের একটি পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছিল। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে গোওয়াদার বন্দর। এত সব অবনতির মধ্যেও দুই দেশ বড় কোন দ্বন্দ্বে জড়ায়নি। আবার তারা তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কখনো ব্যবহারও করেনি।

ইসলামাবাদের ইন্সটিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা ফেলো আরহামা সিদ্দিকা বলেন, ২০২১ সাল থেকে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ ইতিবাচকভাবেই এগিয়ে চলছিল। কিন্তু তারপরও পাকিস্তান বেশ সতর্কতার সাথেই পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল।

আরহামা সিদ্দিকা বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডের অখণ্ডতার বিষয়ে কোনও ছাড় দিতে পারবে না। কিন্তু একই সাথে তারা আরেকটি যুদ্ধক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে চায় না। ভারত ও আফগানিস্তানের সাথে এরই মধ্যে তাদের সম্পর্ক খারাপ। ইসলামাবাদ আরেক প্রতিবেশীর সাথেও সম্পর্ক খারাপ করতে চাইবে না।

ইকরাম সেহগাল নামে একজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বিবিসিকে বলেন, পাকিস্তান এ পর্যন্ত ইরানের সাথে যথাযথভাবেই সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে। এমনও সময় ছিল যখন পাকিস্তান ‘সৌদি শিবির’-এর অংশ হতে চায়নি। বিশেষ করে ২০১৫ সালে যখন সৌদির নেতৃত্বে সুন্নি জোট ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে তখন পাকিস্তান এর অংশ হতে অসম্মতি জানায়।

পাকিস্তান তখন বুঝতে পেরেছিল যে, আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সংঘাতে জড়ালে তার বিপদ হচ্ছে, দেশের মধ্যে শিয়া ও সুন্নি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন একটি লড়াই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তবে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সাম্প্রতিক সুসম্পর্ক এই চাপ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।

ইকরাম সেহগাল বিশ্বাস করেন, ইরান বোঝে যে তারা আরেকটি প্রতিবেশীর সাথে নতুন করে আরেকটি যুদ্ধাবস্থা শুরু করতে পারবে না কারণ দেশটি এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখেও বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেশটিকে। তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের উচিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া এবং অন্য দেশে হামলা চালাতে নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া।

ইরানেরও এ ধরনের বিপর্যয়মূলক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তাদের উচিত যোগাযোগ করে সমন্বয় করা। তা না হলে, এ ধরণের পদক্ষেপ এই অঞ্চলটিকে আরেকটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে যা এই অঞ্চলের মানুষ সহ্য করতে পারবে না, বলছেন মি সেহগাল।

দেশসংবাদ/এমএইচ/এফএইচ


আপনার মতামত দিন
শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল তুরস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Wednesday, 16 October, 2024
তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Monday, 14 October, 2024
পুলিশ সদরদপ্তরে জঙ্গি হামলা, ৩ নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Monday, 14 October, 2024
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র চমকে দেবে  বিশ্বকে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Thursday, 3 October, 2024
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক
এফ. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: [email protected]
up