শিরোনাম: |
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে যে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৫ টাকা তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকায়। খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সদ্য শেষ হওয়া বছরে আমন ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, ব্রি ২৮ চাল ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, দেশি মোটা চাল ৫০ টাকা, পোলাওয়ের চাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। এছাড়া সব ধরনের চালে বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নানা অজুহাতে মিলাররা অধিক দামে চাল বিক্রি করায় পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে চালের দাম। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। অনেকে আবার ইঙ্গিত করছেন নির্বাচনের প্রভাবকেও।
দেশে মোট চাল উৎপাদনের ৪০ শতাংশ হয় আমন মৌসুমে। কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। মোট ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫৭ লাখ ২৭ হাজার হেক্টর বা সাড়ে ৯৭ শতাংশ জমির ধান। এখান থেকে চাল উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৩ হাজার টন। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরপ্রতি ২ দশমিক ৯৮ টন। বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান।
পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও অতিরিক্ত মুনাফার আশায় চাল মজুত করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। মহাখালী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী জনি বলেন, সব ধরনের চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। যা গত সপ্তাহেও কম ছিল। পাইকাররা বলছেন মিলার রেট বেশি, তাই দাম বেড়েছে। মূলত সিন্ডিকেটের ফলেই দাম বেড়ে গেছে।
সেলিম রাইস ভাণ্ডারের স্বত্বাধিকারীর আব্দুল কুদ্দুস বলেন, চালের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়ে গেছে। মিলাররা নানা কারণ দেখায়, কিন্তু মূলত দাম ইচ্ছা করে বাড়িয়েছে তারা। আমাদেরও কিছু করার নেই। সরকার যদি সঠিকভাবে মনিটরিং না করে তাহলে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমবে না।
এদিকে চালের বাজার বিভিন্ন সময় অস্থির হয়ে উঠলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে বরাবরই হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে। তাই স্বল্প আয়ের মানুষকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল বিতরণ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির কার্যক্রমও। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রথমবারের মতো সরকারের এই সংস্থা তাদের পণ্যে চাল যুক্ত করেছে, যা অনেক কম মূল্যে পাচ্ছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল বিতরণ করা হয়েছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে চাল আমদানি করেনি সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে প্রায় ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল আমদানি হয়। গত নভেম্বরে মোটা ও মাঝারি আকারের চালের দাম কিছুটা বাড়লেও তা ডিসেম্বরে কমে আসে। তবে মাস না যেতে আবার বাড়তে শুরু করেছে দাম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে।
দেশসংবাদ/এমএইচ/এফএইচ
আপনার মতামত দিন
|