Published : Friday, 3 November, 2023 at 8:47 PM, Update: 03.11.2023 9:44:38 PM
জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৮) কে সামনে রেখে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছে বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন নিউজ সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আসন্ন কপ-২৮ সংবাদ গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য দুই দিনব্যাপী ‘জার্নালিজম ইন দ্যা এজ অব ক্লাইমেট অ্যাকশন: কপ ২৮ কাভারেজ স্ট্র্যাটেজিকস অ্যান্ড মেনটরিং’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পরিবেশ, জলবায়ু, লস এন্ড ড্যামেজ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ১২টি মডিউলে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। কর্মশালায় প্রিন্ট মিডিয়ার ৪২, টেলিভিশনের ১৯ এবং অনলাইনের ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করছেন।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীর প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র কনফারেন্স রুমে কর্মশালাটি শুরু হয়। শনিবার (৪ নভেম্বর) একই ভেন্যুতে কর্মশালার সমাপনী দিনের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার সকালে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ.এস.এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা আরও দুই ডিগ্রি বাড়লে বর্তমানে বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে যে খরা হচ্ছে তা ক্রমান্বয়ে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, লস এন্ড ড্যামেজ নিয়ে বিগত জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে (কপ) আলোচনা হলেও ফান্ড নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে ও কোথাও কমছে। আর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে মানুষের কর্ম ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
উপাচার্য বলেন, বর্তমানে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তার জন্য যে অর্থায়ন প্রয়োজন তা কে দিবে? বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের সপ্তম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বিশ্বের তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি রাখতে পারলে দুর্যোগে ক্ষতি কম হবে।
ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং জলবায়ু বিপর্যয়ের যুগে বসবাস করছি। চীনের পর ২য় সর্বোচ্চ সংখ্যক জলবায়ু উদ্বাস্তু বাংলাদেশে রয়েছে। এতটুকু আয়তনের ব-দ্বীপের ২৫% বিলীন হয়ে গেলে, সেই অসহায় মানুষদের কী হবে! জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব বাংলাদেশের উপর সবচেয়ে বেশি তাই আমাদের এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি, সাংবাদিকদের প্রস্তুত করতে এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ক্যাপস ও পিআইবির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, একটি উন্নয়নশীল এবং ডেলটা ব-দ্বীপ দেশ হিসেবে জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই যৌক্তিক। কপ-এ সকল দেশের প্রতিনিধিরা এক মঞ্চে উপস্থিত হন, তাই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিক গোষ্ঠী পারেন এ দেশের মানুষের যৌক্তিক দাবিকে যথাস্থানে তুলে ধরে প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদেরকে এই পরিবর্তনশীল জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ইকোসিস্টেমকে রক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রোজেক্ট অব এনালাইসিস এর সাথে থিওরি অব চেঞ্জ কে প্রয়োগ করতে হবে। যে দেশগুলো ক্ষতিপূরণ নিয়ে বসে আছে, যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যম আমাদেরকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে আনতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে এখন ছয় ঋতু খুঁজে পাওয়া যায় না। আমরা এখন বছরের নয় মাস উত্তাপের মধ্যে কাটাই। শীতের প্রকোপও অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, বিগত জলবায়ু সম্মেলনগুলোতে অনেক কথা বলা হয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। আসন্ন দুবাই সম্মেলন যাতে এই অবস্থায় না পড়ে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথম দিনের কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন, সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মোঃ শামসুদ্দোহা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (ন্যাকম)’র নির্বাহী সমন্বয়ক ড. এস এম মনজুরুল হান্নান খান, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ’র প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ সামছুদ্দিন ইলিয়াস, ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’র নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধরিত্রী কুমার সরকার এবং যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি মো. মাহফুজুর রহমান মিশু।
শনিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন, প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি মাসদুপুয় এবং সুইডেনের দূতাবাস, বাংলাদেশে সুইডেনের ফার্স্ট সেক্রেটারি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং ডেপুটি হেড, ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন সেকশনের নাইওকা মার্টিনেজ ব্যাকস্ট্রোম