Published : Wednesday, 30 September, 2020 at 1:44 PM, Update: 30.09.2020 2:35:03 PM
বরগুনার বহুল আলোচিত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে রায় পড়া শুরু হয়।
এর আগে সোয়া ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালতে হাজির করা হয় এ মামলায় কারাগারে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক আট আসামিকেও। এ ছাড়া আদালতে হাজির হয়েছেন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও এ মামলার অন্যতম আসামি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। জামিনে থাকা মিন্নি সকাল ৯টায় তার বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে আদালতে হাজির হন।
রায়কে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে পুলিশি। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে জজকোর্ট হয়ে সার্কিট হাউস পর্যন্ত নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের হেফাজতে দিয়েছেন।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রায় পড়ে শোনাবেন। বরগুনার সবার নজর এখন আদালতের দিকে। এ মামলায় কৌতূহল মিন্নিকে নিয়ে। মিন্নি দোষী কিংবা নির্দোষ তার প্রমাণ হবে রায়ের মধ্য দিয়ে।
জানা যায়, গত বছর ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে নয়ন বন্ড ও তার বন্ধুরা রিফাত শরীফকে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ২৭ জুন বরগুনা থানায় নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।
২ জুলাই সন্ত্রাসীদের গুলিতে নয়ন বন্ড নিহত হন। পরে ওই বাদী ৬ জুলাই মিন্নিকে আসামি করার জন্য বরগুনা থানায় একটি আবেদন করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. হুমায়ূন কবির ১৬ জুলাই আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার করেন।
১৯ জুলাই মিন্নি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। মিন্নিকে বরগুনা জেলা জজ ৩০ জুলাই জামিন নামঞ্জুর করলে সেই আদেশের বিরুদ্ধে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন।
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্ট ২৯ আগস্ট জামিন দেন। রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির জামিন বাতিল চেয়ে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার জজ ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। সেই অবধি মিন্নি জামিনে রয়েছেন।
২ মাস ৬ দিন তদন্ত করে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর দুই খণ্ডে ২৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বরগুনা সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামি। তারা হলো- রাকিবুল হাসান রিফাত শরীফ, আল কাইয়ুম রাব্বি আকন, রেজোয়ানুল ইসলাম টিকটক হৃদয়, হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, সাগর, আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি, কামরুল হাসান সায়মুন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত ও মুসা।
১৬ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক, যুক্তিতর্ক খণ্ডন ও উচ্চ আদালতের আইন আদালতে উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর এ রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করেন বিচারক। আসামি মো. মুসা পলাতক রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৭৬ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী যুগান্তরকে বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস মিন্নি আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পাবে। মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফকে সেদিন রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, যা ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রমাণ। শুধু তাই নয়, আহত রিফাত শরীফকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। অথচ তদন্তকারী কর্মকর্তা সেই ভিডিও জব্দ করেনি। রাষ্ট্রপক্ষ গত বছর ১ জানুয়ারি মিন্নির বিরুদ্ধে জামিন বাতিলের আবেদন করে। আদালত বরগুনা থানাকে সেই আবেদনটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।
বরগুনা থানার পুলিশ পরিদর্শক সরজিৎ সরকার ৯ ফেব্রুয়ারি মিন্নির বিপক্ষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। তার পরও আদালত মিন্নির জামিন বহাল রেখেছেন। মিন্নিকে আমার হেফাজতে দিয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনার পাবলিক প্রসিকিউটর ভুবন চন্দ্র হাওলাদার যুগান্তরকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে ৭৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সব সাক্ষ্য বাদীর মামলা সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছে। আমরা আদালতে আসামিদের ফাঁসির দাবি করেছি। আমাদের বিশ্বাস অধিকাংশ আসামির ফাঁসি হবে।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তিতর্কের জন্য ছিল। রাষ্ট্রপক্ষে আসামিদের যুক্তিতর্কের অনেক তথ্য খণ্ডন করেছে। এ ছাড়া আসামি টিকটক হৃদয়ের পক্ষে তার আইনজীবী মো. লুৎফর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ সাতজন সাক্ষীর জবানবন্দি পুনরায় তলব করার আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।
উল্লেখ্য, রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ১৪ জন শিশু আসামি।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং বন্ড গ্রুপ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন।