শিরোনাম: |
সাহেদকে দিয়েই কী স্বাস্থ্য সেক্টরের শুদ্ধি অভিযানের শুভ সূচনা? রিজেন্ট হাসপাতালের পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে এই সেক্টরের মাফিয়াদের নাম। তমা গ্রুপ, জিএমআই গ্রুপ ও মিঠু সিন্ডিকেটসহ ১৮ মাফিয়া ইতিমধ্যে কালো তালিকাভূক্ত। ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের আদলে স্বাস্থ্যখাতেও চলবে বুলডেজার।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের লুটপাট গিনিস বুকে রেকর্ড হওয়ার দাবী রাখে। করোনায় জরুরী চিকিৎসার জন্য বরাদ্দকৃত ২শ কোটি টাকা হিসাব দিতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যখাত এখনও জিম্মি ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কাছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন বুলড্রোজার চালানো সময়ের দাবী। যা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের বিকল্প নাই। ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযানের ন্যায় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জরুরি। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অন্যতম ঠিকাদার জেএমআই গ্রুপ চিকিৎসকদের অন্যতম সুরক্ষা সামগ্রী এন৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। যা ছিলো নকল। চিকিৎসকদের আপত্তির পর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক নাকি জামাতপন্থি। বেচারা নকল মাস্ক সরবরাহের মাধ্যমে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের স্বপ্ন দেখে। ১৯এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভূলবসত এন৯৫ মাস্কের র্কাটুনে ‘ফেইস মাস্ক’ ঢুকানো হয়। বাহ! কি চমৎকার যুক্তি! কিন্তু এর মধ্যে যা সর্বনাশ হওয়ার তা সুসম্পন্ন। দুদক ইতিমধ্যে ১৪টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভূক্ত করেছে। কিন্তু বহুল আলোচিত মিঠুর প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে ধরাছোয়ার বাইরে।
মিঠু সিন্ডিকেট গঠিত হয় ১৯৯১ সালে বিএনপি’র শাসনামলে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে মিঠু সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়। অনেক মন্ত্রী-সচিব ছিলেন মিঠুর ‘বিজনেস পার্টনার’। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই বিল উত্তোলন, নির্ধারিত যন্ত্রপাতির বদলে অকেজো পুরানো এবং নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সরকারী হাসপাতাল গুলোকে ফেলে দিয়েছে ধ্বংসের মুখে। মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিএমএসডি, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, ওষুধ প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, নার্সিং অধিদপ্তরসহ প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে তার বিশ্বস্ত এজেন্ট। এই সিন্ডিকেট ভেঁঙ্গে দেওয়ার জন্য ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নোয়াখালীর এমপি একরামুল হক চৌধুরী। নারায়নগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জের এমপি মজিবুল হক সংসদ বলেছেন স্বাস্থ্যখাতের এই লোভনীয় ব্যবসা করতে নাকি বিলগেটসও এখন বাংলাদেশে আসতে উদগ্রীব।
মূলত লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দূর্নীতির কারণেই স্বাস্থ্য খাতের এই বেহাল দশা। এবারের বাজেটে কভিড-১৯ মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা ব্যায়ের পরিকল্পনা, সমীক্ষা গবেষণা, টেন্ডার ইত্যাদি সম্পাদনের দীর্ঘসুত্রিতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে। বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে ৭টি বিভাগীয় হাসপাতালের ১ হাজার কোটি টাকা ও ঢাকার ১০টি হাসপাতালে ১ হাজার কোটি টাকায় আইসিও, ভেন্টিলেটার ও অক্সিজেন সরবরাহে জরুরীভাবে ব্যয়ের নির্দশনা প্রয়োজন ছিল। দেশের ৫৪ জেলা হাসপাতাল এখনও আইসিও, ভেন্টিলেটারবিহীন। করোনা চিকিৎসা উপযোগী নিদের্শনা প্রয়োজন ছিল। অথচ নেই কোন এসম্পর্কিত প্রস্তাবনা। স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের এ অর্থ সুষ্ট ও সঠিক ব্যবহার নিয়ে ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় সন্দেহ প্রকাশ করেন গাইবান্ধার এমপি ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও সুনামগঞ্জের এমপি পীর মীসবাহ। চিকিৎসা সেক্টরের ভামূর্তি পুন:উদ্ধারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি আমাদরে আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। একমাত্র আপনিই পারেন স্বাস্থ্য সেক্টরের সম্ভবনার দ্বার উন্মোচন করতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটের কারণে স্কুল-কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এখন ডাক্তারীকে ফাস্ট চয়েজ দিতে নারাজ। এমবিবিএস পাশের পর মেধার যথাযথ মুল্যায়ন না পেয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। অথচ ছাত্র জীবনে এই মেধাবীদের রচিত অরস রহ খরভব রচনায় মানবাধিকার, সামাজিকতা, নৈতিকতা, দেশ-প্রেমে বাংলাদেশেই ছিলো স্বপ্ন ও অহংকার। করোনায় ডাক্তারদের অধিক হারে মৃত্যুতে তারা এখন হতাশ ও উৎকণ্ঠিত। অপ্রিয় হলেও সত্য, ক্লাসের ঐ মেধাবী ফাস্টবয় ডাক্তার হয়ে ক্যাডার জটিলতায় নাজেহাল। পেছন বেঞ্চের ছাত্রটি মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগে পড়ে বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে এখন মন্ত্রণালয়ের সচিব। স্যারের মেজাজ, মর্জি মোতাবেক কাজ না করলে বান্দরবনের হাসপাতালে বদলী। যা ক্যাডার সার্ভিসে পেশাজীবী চিকিৎসকদের জন্য লজ্জাজনকও বটে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও সচিব দু’জনই ডাক্তার হলে কি অনেক ইতিবাচক ফলাফল আসতো না? তাই এখন সময় এসেছে চিকিৎসকদেরকে দেশ প্রেমে উদ্বৃতকরণ পূর্বক স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের বিপ্লব সাধন।
বিশ্বের চলমান প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা সেক্টরের উন্নয়নের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পর্যালোচনা দরকার। উল্লেখ্য, করোনার কবলে পড়ে পৃথিবীর শীর্ষ সুপার পাওয়ার আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা চিৎপাটাং। শীর্ষে পৌছার দ্বার প্রান্তে চীন। দেশটির জন্য মনে হয় করোনা পৌষ মাস বা আর্শীবাদ স্বরূপ। চীন থেকে করোনা সুত্রপাত হলেও এখন পরিস্থিতি তাদের পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে। ভাইরাসটি মোকাবেলায় পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যখন নাস্তানাবুদ। চীন তখন ব্যস্ত ব্যবসা বানিজ্য ও শেয়ার বাজার দখলে। বলতে গেলে তারা সফলও। করোনা বিষয়ক চিকিৎসা সামগ্রী ব্যবসার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের অর্থনীতি। বিশ্বের স্টক মার্কেটের প্রায় অর্ধেক শেয়ার এই সুযোগে চলে এসেছে দেশটির নিয়ন্ত্রণে। অস্ত্র ও ক্ষেপনাস্ত্রে এখন মনোযোগ নেই। করোনা ভাইরাসের মরোনাস্ত্রকে পুজি করে তারা ঝুকে পড়েছে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বানিজ্যে। বাংলাদেশকেও এ বিষয়টি মাথায় রাখা এখন বৈষয়িক দাবী।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিপন্ন বিদ্যুৎ সেক্টরের আদলে প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে অনুরূপ কর্মসূচী গ্রহণ। গার্মেন্টস শিল্পের মতোই প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের সম্ভবনা এই চিকিৎসা সেক্টরে। ভারত, থাইল্যান্ড, মালেশিয়া পারলে আমরা কেন পারবো না? রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকায় হাসপাতাল ও পর্যটনে মেঘা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নতুনভাবে সাজানো যায় বাংলাদেশকে। জনবল। মেধা। কি নাই আমাদের? বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা স্বাস্থ্যখাতে আমাদের মেধাবীদের কাজে লাগাতে চাই আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা। গ্রহণ করতে হবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী সৃষ্টির প্রকল্প। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে স্বাস্থ্যখাতের এই দক্ষ জনশক্তি বিদেশেও রপ্তানীর রয়েছে সমূহ সম্ভবনা। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর আহ্বানে সাড়াদিয়ে ডা: বিড়ালা লন্ডন থেকে কলকাতায় চলে আসেন। যার ধারাবাহিকতায় চিকিৎসা সেক্টরে দেশটি এখন উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ই পারেন অনুরূপ আহবান জানাতে। পারেন স্বাস্থ্যখাতের এই দুষ্ট বিড়ালটির গলায় ঘন্টা বাঁধতে।
লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক নতুন সময়
দেশসংবাদ/এমএসডি/এফএইচ/mmh
আপনার মতামত দিন
|