শিরোনাম: |
দেশে প্রতিনিয়ত নারী বা শিশুরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের স্বীকার হলেও মহামারি করোনাকালে তুলনামূলকভাবে তা এখন অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্যাতনের সাথে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। করোনাকালের অবরুদ্ধ সময়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুর সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণে। দুপুরে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম রংপুর জেলা কমিটি আয়োজিত 'করোনাকালের অবরুদ্ধ সময়ে শিশুদের প্রতি আমাদের কর্তব্য' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
করোনাক্রান্তির কারণে অনলাইনে (জুম মিটিং) অনুষ্ঠিত সভায় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। কিন্তু করোনাকালে এই নির্যাতনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। যা উদ্বেগজনক। এই দুর্যোগে নির্যাতন, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন, বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ জনপদের শিশু-কিশোররা। এই সময়টাতে অপরাধ প্রবণতাও বেড়েছে আশঙ্কা জনকভাবে।
বক্তারা আরও বলেন- করোনাকালীন সময়ে প্রত্যেকটি পরিবারে এক ধরণের সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক, মানসিক এবং নানা ধরনের যে দুর্যোগ আসছে এটা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে দিয়েছে। রংপুর জেলার গ্রামগুলোতে আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়া পরিবারগুলোতে অপ্রাপ্ত মেয়েকে নিরুপায় হয়ে বিয়ে দেওয়ার ঘটনা বেড়েছে।
সভায় অ্যাডভোকেসি ফোরামের কেন্দ্রীয় সম্পাদক নাসিমা আক্তার জলি বলেন, শুধু জুন মাসেই ৫৩টি জেলায় ১২ হাজার ৭৪০ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। করোনাকালিন এই সময়ে শিশুদের উপর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বেড়ে গেছে। অনেক মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছে শিশু।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম রংপুর জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জুর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহি আব্দুস সালাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক রংপুর জেলা সভাপতি আকবর হোসেন, উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শ্বাশত ভট্টাচার্য, শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি রেজিষ্টার ডা. রাজীবুর রহমান, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ফরহাদুজ্জামান ফারুক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা ও পরিচালনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর আঞ্চলিক সমন্বয়ক রাজেশ দে। এতে জিইউকে, প্লান বাংলাদেশ, ইউসেপ ,পাসের কর্মকর্তারা ছাড়াও শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, আইনজীবী, গৃহিণী, সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এসময় বক্তারা বলেন, শহরের স্কুল-কলেজের ছেলে মেয়ে ও শিশুরা বাসায় অনলাইনে পড়ালেখা ও বিনোদনের সুযোগ পেলেও গ্রামে তা নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে হাজারো শিশুর শিক্ষা জীবনও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ এই সময়ে শিশুদের সুস্থ ও স্বাভাবিক মন ঠিক রাখতে তাদের প্রতি কোন চাপ সৃষ্টি করা যাবে না, বরং শিশুদেরকে ভালোবাসা দিয়ে তাদের কথা শুনতে হবে। তাদেরকে বেশি করে সময় দিতে হবে। যাতে মহামারির ভীতি তাদের মন থেকে কেটে যায়। স্বাভাবিক জীবনের ফেরার স্বপ্ন দেখাতে শিশুদের বিকাশে গুরুত্ব দেয়ার প্রতিও আহ্বান জানান বক্তারা।
দেশসংবাদ/প্রতিনিধি/এনকে
আপনার মতামত দিন
|