Desh Sangbad
Desh Sangbad
শিরোনাম: ■ আটক ৩ বাংলাদেশিকে ফেরত আনল বিজিবি ■ বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু ■ আইন-বিধি মেনে কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ ■ সিদ্ধিরগঞ্জে আরাকান আর্মির ৬ সদস্য গ্রেপ্তার ■  দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি গণঅধিকার পরিষদের ■ ক্রিকেটার সেজে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা, ১৫ বাংলাদেশি আটক ■ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে ইসির গণবিজ্ঞপ্তি স্থগিত
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মাত্রা
Published : Monday, 17 March, 2025 at 12:56 PM

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সুসম্পর্ক

পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সুসম্পর্ক

গত বছর বাংলাদেশের নাটকীয় রাজনৈতিক ঘটনাবলীর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে অনেক ঘটনা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে— যার মধ্যে এক সময়ের শত্রু পাকিস্তানের সাথে ঢাকার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে।

এদিকে উভয় দেশের সম্পর্কের এই উন্নতির বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ভারত। সোমবার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, কয়েক দশকের অস্থির সম্পর্কের পর গত মাসে দুই দেশ প্রথমবারের মতো সরাসরি বাণিজ্য শুরু করে। ঢাকা এসময় পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করে। উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান এবং সামরিক যোগাযোগও পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, ভিসা পদ্ধতি আরও সহজ করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়েও সহযোগিতার খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের ভূখণ্ড দ্বারা বিচ্ছিন্ন এই দুটি দেশের মধ্যে গভীর, বেদনাদায়ক ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের মধ্যে শত্রুতা ১৯৭১ সাল থেকে শুরু হয়, যখন বাংলাদেশ — তখন পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত — ইসলামাবাদ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। নয় মাসব্যাপী যুদ্ধের সময় ভারত বাঙালি বিদ্রোহীদের সমর্থন করে যার ফলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

যদিও সেই সময়ের ক্ষত ছিল গভীর তারপরও ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। সেসময় বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর একটি জোট সরকার।

তবে ২০০৯ সাল থেকে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে এই সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়। সেসময় তিনি দিল্লির কাছ থেকে দৃঢ় সমর্থন পেয়েছিলেন এবং পাকিস্তান থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং এরপর বাংলাদেশের ও পাকিস্তানের সম্পর্কের বরফ গলছে বলে মনে হচ্ছে।

সাবেক বাংলাদেশি কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে, পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক কিছুটা কঠিন পথে ছিল। তবে এই সম্পর্কটি এখন ‘দুটি স্বাভাবিক প্রতিবেশী দেশের’ মতো অবস্থায় ফিরে আসছে বলে মনে হচ্ছে।”

তবে দুই দেশের সম্পর্কের ক্রমশ উন্নতির এই ঘটনাবলী বিশেষ করে ভারতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কারণ পাকিস্তানের সাথে এই দেশটির দীর্ঘ বৈরী সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে।

হাসিনার বিদায়ের পর থেকে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সম্পর্কও এখন তিক্ত। মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হতে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সেই দাবির প্রতি ভারত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। হাসিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। লন্ডনের কিংস কলেজের সিনিয়র ফেলো এবং পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে একটি কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। একসাথে তারা ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি ধাক্কা দিতে চায়।”

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য শুরু করা ছাড়াও অন্যান্য ঘটনাও ঘটছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বহুপাক্ষিক ফোরামে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সাথে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্কও রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশি সামরিক প্রতিনিধিদল পাকিস্তানে সফর করেন এবং বিরল সেই সফরে পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের সাথে আলোচনা করের তারা। এরপর ফেব্রুয়ারিতে করাচি উপকূলে পাকিস্তান কর্তৃক আয়োজিত বহুজাতিক নৌ মহড়ায় বাংলাদেশি নৌবাহিনীও অংশগ্রহণ করে।

২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বীণা সিক্রি ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতাকে “ডেজা ভু” মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকায় তার মেয়াদকালে ভারত বারবার “আইএসআই (পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা) এবং বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর একটি অংশের সহায়তায় ভারতীয় বিদ্রোহীদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার” বিষয়টি উত্থাপন করেছিল।

তার দাবি, “আমরা এমনকি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে প্রমাণও দিয়েছিলাম”। তবে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সেই সময় এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিল।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘ ও ছিদ্রযুক্ত সীমান্তের কারণে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করা তুলনামূলকভাবে সহজ হয়ে পড়ে। কিন্তু ২০০৯ সালে হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা এই গোষ্ঠীগুলোর বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাদের ঘাঁটি ভেঙে দেয়।

তাই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করা “ভারতের জন্য প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগ” বলে বীণা সিক্রি দাবি করেন।

তিনি আরও দাবি করেন, “এটি কেবল সামরিক সম্পর্ক নয়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জামায়াতে ইসলামীর মতো বাংলাদেশি ইসলামপন্থি দলগুলোর সাথেও সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইসলামাবাদকে সমর্থন করেছিল।”

এর আগে আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করেছেন বলে ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়। তবে ড. ইউনূস প্রশাসনের প্রেস অফিস ভারতীয় মিডিয়ার এসব প্রতিবেদনকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি পাকিস্তানি কর্মীরা বাংলাদেশে ভারতীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শিবির পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করছে— এমন প্রতিবেদনগুলোকেও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে প্রেস অফিস।

বাংলাদেশে আইএসআইয়ের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ সম্পর্কে বিবিসির প্রশ্নের জবাব দেয়নি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী।

ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক সাবরিন বেগ বলেন, “পাকিস্তানের ২৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য একটি শক্ত বাজার।”

তিনি বলেন, বর্তমানে উভয় পক্ষের ওপর উচ্চ শুল্কসহ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং ব্যবসা ও রপ্তানিকারকরা ভিসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তবে “উন্নত দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এই সীমাবদ্ধতাগুলো কমিয়ে আনবে”।

আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের সময় এই বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু আলোচনা হতে পারে। এছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে এবং নতুন সরকারের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি থাকলেও থাকতে পারে।

তবে, যাই ঘটুক না কেন, দিল্লির জন্য ঝুঁকি বেশি। কারণ তারা দৃঢ়ভাবে মনে করে, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য তাদের স্থিতিশীল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ প্রয়োজন।

দেশসংবাদ/এনএস


আপনার মতামত দিন
ঢাকা ছাড়লেন জাতিসংঘের মহাসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
Sunday, 16 March, 2025
বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাতিসংঘ
নিজস্ব প্রতিবেদক
Saturday, 15 March, 2025
ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thursday, 13 March, 2025
আরো খবর
সর্বশেষ সংবাদ
আরো খবর >>
https://deshsangbad.com/ad/1699508455_1491666999_th.jpg
সর্বাধিক পঠিত
ফেসবুকে আমরা
সম্পাদক
এফ. হোসাইন
উপদেষ্টা সম্পাদক
ব্রি. জে. (অব.) আবদুস সবুর মিঞা
ঠিকানা
৮০২ ভিআইপি রোড, কাকরাইল
ঢাকা-১০০০, বাংলাদেশ।
Developed & Maintenance by i2soft
যোগাযোগ
ফোন: +৮৮ ০২ ৪৮৩১১১০১-২
মোবাইল: +৮৮ ০১৭১৩ ৬০১৭২৯
ইমেইল: info@deshsangbad.com
up