নির্বাচন হলে অনেক সংকট দূর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা সংস্কার চাই না, এটা ভুল। আমরা সংস্কারও চাই, দ্রুত নির্বাচনও চাই। কারণ, নির্বাচন হলে সব সংকট কেটে যাবে। নির্বাচন হলে আমাদের শক্তি বাড়বে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রথম কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
কাউন্সিলে জুলাই-আগস্টের ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বুথে জুলাই-আগস্টের নানা স্মৃতির প্রতীকী ছবি দেখা গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়াবহ দানবের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। এটা যাতে নষ্ট না হয়ে যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। গত ১৬ বছরে বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। ৭০০ জন গুম হয়েছে। নিহত হয়েছে ২০ হাজারের মতো।
তিনি বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করছি। তবে, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না, রাজনৈতিক অবস্থাও ভঙ্গুর। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতীয় সরকার গড়তে চাই। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৬ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আমাদের কোনো বিভেদ নেই। তবে আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা পারবে না। আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। হঠকারী সীদ্ধান্ত না নিই।
১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করছেন। এতে করে দেশের শিল্প কারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্রব্যমুল্যর দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পাবে। অতীতে শেখ হাসিনার সরকারও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কলকারখানা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। দ্রব্যমুল্যর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, অথচ বলছেন সংস্কার করবেন! দ্রুত জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সম্মানে বিদায় নিন আহবান।
গনসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে নতুন গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। সেখানে সবাই অংশীদার হবে। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু ৫৩ বছরেও আমরা চালু করতে পারেনি। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি হবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। জুলাই আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার করা। বিগত সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা গনতন্ত্রের নামে দেশের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় জানানোর জন্য এবি পার্টি রাজপথে ছিল। গত ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। একটা অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। নুন্যতম সংস্থার শেষে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার জরুরি। জাতীয় নির্বাচন দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জাতীয় নির্বাচনে দেওয়ার এই সরকারের প্রধান কাজ। নির্বাচিত সরকার এসে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেবে।
জাতীয় গনতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, এবি পার্টি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইগলের মতো রাজপথে সব সময় সোচ্চার ছিল। শেখ হাসিনার চোখে চোখ রেখে কথা বলেছিল তারা। আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয় যায়নি, মানুষের ভোটের অধিকার, গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ না হওশা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
গনঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, গনহত্যায় জড়িত শেখ পরিবারসহ আওয়ামী লীগের দোসর ও পুলিশের সদস্যদের কেন গেপ্তার করা হচ্ছে না? তাহলে তারা (সরকার) কিসের সংস্কার করছে?আগামী দিনে আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এই সরকারকে আমরা সেই সুযোগ দেবো না। আগামী দিনে কি করবেন, নির্বাচন কবো হবে তার একটা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গনঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার ও আহতরা বলেন, জুলাই আগস্টের আামদের সন্তানদের হত্যার যেন বিচার করা হয়। কোনো জুলমবাজ সরকারকে আর দেখতে চাই না।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড.আহমদ আব্দুল কাদের, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, জাতীয়তাবাদী গনতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারি প্রমুখ।